সম্প্রতি, আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনার পর সাদা কাফনে মোড়ানো এক ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ছবির ব্যক্তি সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদকে বিস্ফোরণ ও হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

টুইটারে একই দাবিতে প্রচারিত একটি টুইট দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ছবিটি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির নয় বরং এটি মালয়েশিয়ার দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নেওয়া একজন জীবিত ব্যক্তির ছবি।
আলোচ্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Blogspot.com নামের একটি ব্লক সাইটে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একই ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
“ACTIVITIES IN KPTM” শীর্ষক সেই ব্লগ পোস্ট থেকে জানা যায়, লেখক ‘REHLA-AL-KHULUD PROGRAMS’ নামের দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক কর্মশালায় যুক্ত ছিলেন। সেই কর্মশালায় ধর্মীয় বিধিবিধান অনুসারে মরদেহ দাফন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছিলো।

পরবর্তীতে, ব্লগসাইটটির অন্য একটি ব্লগপোস্টের মাধ্যমে লেখকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় রিউমর স্ক্যানার টিম। লেখকের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কিত সেই ব্লগপেজ থেকে জানা যায় লেখকের নাম Mohammad Haris.

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যম, লেখকের ব্লগপেজে প্রাপ্ত নামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ Haris Sebiey নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। ব্লগসাইটে প্রাপ্ত লেখকের ছবি ও ফেসবুক আইডিতে প্রাপ্ত ছবি তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ব্লগের লেখক এবং ফেসবুক একাউন্টের মালিক একই ব্যক্তি।

পরবর্তীতে, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবরের একটি পোস্টেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের চেক-ইন ডেসক্রিপশনে Kolej Poly-tech MARA নামক স্থান স্থানের উল্লেখ্য পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে, গুগল সার্চের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে Kolej Poly-tech MARA মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি পলিটেকনিক কলেজ। যা সংক্ষেপে KPTM নামে পরিচিত।

অর্থাৎ, আলোচ্য ছবিটির মূল উৎস (ব্লগপেজ এবং লেখকের ফেসবুক পোস্টের) তথ্য অনুসারে ছবিটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালাপুরের একটি কলেজের কর্মশালা থেকে ধারণ করা হয়েছে।
ঘটনার অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে, ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর KPTM কলেজে সত্যিই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবস্থাপনা(মৃতদেহ দাফন) সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার। KPTM PART-TIME JOBS & VOLUNTEERING ACTIVITIES নামক গ্রুপের একটি ডিজিটাল ব্যানারে ১১ই অক্টোবর KPTM আয়োজিত Rehlah-Al-Khulud নামের সেই কর্মশালার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়াও, সেদিনের কর্মশালায় অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থীর ব্লগসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর KPTM এ আয়োজিত REHLAH-AL-KHULUD অনুষ্ঠানের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্লগ পেজটিতে পাওয়া তথ্য থেকে এও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সেদিনের কর্মশালায় দাফনকার্য সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল।

মূলত, ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর মালয়েশিয়ার কুয়ালালাপুরে মরদেহ দাফনকার্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার হয়। ঐ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ধারণকৃত এক ব্যক্তির কাফন মোড়ানো ছবিকে সম্প্রতি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক বিভ্রান্তিকর তথ্যকে সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মালয়েশিয়ায় মরদেহ দাফন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছবিকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির ছবি দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে: যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।