ছবিগুলো নাসা বা ইসরো তুলেনি এবং এগুলো সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবিও নয় 

সম্প্রতি, ‘এই পর্যন্ত পাওয়া সূর্যের সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা ছবি’ শীর্ষক শিরোনামে কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিগুলো ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) তুলেছে। আবার দাবি করা হচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এই ছবিগুলো তুলেছে। 

সূর্যের

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এসব ছবি তুলেছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এসব ছবি তুলেছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এগুলো সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি নয় এবং ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) বা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এই ছবিগুলো তুলেনি বরং ছবিগুলো রবার্ট আরনল্ড নামের একজন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফারের টেলিস্কোপের সাহায্যে তুলেছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ফ্রি-অ্যাস্ট্রোনমি ফোরাম Cloudy Night এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ১৩ মার্চে ‘robert_arnold’ নামের একজন ব্যবহারকারী কর্তৃক প্রকাশিত মূল ছবিগুলো পাওয়া যায়।

Image  Comparison: Rumor Scanner

ফোরামটি সম্পর্কে জানা যায় যে, এটা মূলত টেলিস্কোপ রিভিউ ফোরাম এবং মহাকাশ বিষয়ে কৌতুহলীরা মহাকাশ সম্বন্ধীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন।

রবার্ট আরনল্ডের ক্যাপশন অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় ব্রাইট প্রমিনেন্স হলো সূর্যের উজ্জ্বলতম অংশের আধিপত্য। সূর্যপৃষ্ঠ থেকে নানা ধরনের অগ্ন্যুৎপাত ও শক্তি অহরহ নির্গত হয়। এর মধ্যে রয়েছে অতি বেগুনি রশ্মি ফ্লেয়ার (Flares), প্রমিনেন্স (Prominence), সানস্পট (Sunspots) এবং করোনাল মাস ইজেকশন (Coronal Mass Ejections) বা সিএমই (CME)। রবার্ট আরনল্ডের তোলা সোলার প্রমিন্যন্সের সময়কালে অর্থাৎ ২০১০ সালের ৩০ মার্চ সূর্যের সম্ভাব্য সৌর ঝড়ের ছবি প্রথম প্রকাশ করে নাসা।

পরবর্তীতে, National Science Foundation তাদের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘’Inouye Solar Telescope দিয়ে তোলা সূর্যের অবিশ্বাস্য কাছের একটি ছবি (অনুবাদিত)” শিরোনামে একটি ছবি প্রকাশ করে।

পাশাপাশি, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই নাসা তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘ESA/NASA’s Solar Orbiter Returns First Data, Snaps Closest Pictures of the Sun’শিরোনামে ‘সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি’ প্রকাশ করে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) এবং নাসা যৌথ ভাবে সূর্য পরিভ্রমণকারী স্পেস পাঠায় ২০২০ সালের সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। সৌর যানটি একই বছরের ৩০ মে সূর্যের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। সৌরযানটির পাঠানো ছবি সম্পর্কে নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, গ্রিনবেল্ট মেরিল্যান্ড-এর প্রজেক্ট সাইন্টিস্ট হলি গিলবার্ট বলেন, এই অবিশ্বাস্য ছবিগুলোই এখন পর্যন্ত সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি। 

এছাড়াও, নাসার প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১৬ জুলাই  বিবিসি-তে প্রকাশিত Solar Orbiter: Closest ever pictures taken of the Sun শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাসার প্রকাশিত সূর্যের নতুন ছবিটি সূর্যের উপরিভাগের ৭৭ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে তোলা হয়েছে এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী এটাই ক্যামেরায় তোলা সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি।

এছাড়া, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আদিত্য L1 সূর্য অভিযানে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলো। আর এই ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো ১৩ বছর পূর্বে। তাই এই ছবিগুলো ইসরোর আদিত্য L1 দিয়ে তোলা সম্ভব না।

মূলত, ২০১০ সালে রবার্ট আরনল্ড নামে একজন মহাকাশপ্রেমী টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যের কিছু ছবি তোলেন। সম্প্রতি এই ছবিগুলো এ পর্যন্ত পাওয়া সূর্যের সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা ছবি যা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) তুলেছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিগুলো এ যাবত কালের সূর্যের সবচেয়ে স্বচ্ছ এবং কাছের ছবি নয়। টেলিস্কোপের সাহায্যে সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি National Science Foundation ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ করে। অন্যদিকে সৌর যান পাঠিয়ে সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি নাসা ২০২০ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশ করে। এছাড়া ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূর্য অভিযানের জন্য আদিত্য L1 যান পাঠায় ২০২৩ সালে। তার ১৩ বছর পূর্ব থেকেই আলোচিত ছবিগুলোর অস্তিত্ব ইন্টারনেটে রয়েছে।

সুতরাং, নাসা এবং ইসরোর তোলা সূর্যের সবচেয়ে কাছের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img