সম্প্রতি, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেট ফি’র রশিদের ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেট করার ফি’র রশিদ দাবিতে প্রচারিত ছবিটি আসল নয় বরং আলোচিত ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে টয়লেট ফি নামের আলাদা কোনো ফি চালু নেই।
গুজবের সূত্রপাত
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Brac University Student Community নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
‘সুমিত জামান’ নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি নিয়ে যে সকল আলোচনা শুরু হয়েছে এর মধ্যে যদি তারা এটি (টয়লেট ফি) নিয়ে আসা হয় তাহলে সত্যিই অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওহ! এখানে ভ্যাট এড করতে ভুলে গিয়েছি।
অর্থাৎ, এই পোস্টের ছবিটি তিনিই তৈরি করেছেন।
পরবর্তীতে বিষয়টির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সুমিত জামানের সাথে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সুমিত জামান জানান, ছবিটি তিনি সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করেছেন।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূলত তাদের উপর গাড়ি পার্কিং ফি চাপিয়ে দেওয়াতে সবাই ক্ষুব্ধ ছিলো। তাই এই মিমটা বানানো হয়েছিল। যেহেতু এই সেই ফি দিচ্ছে সেটাকে নিয়ে মজা করেই এই মিম টা বানানো হয়।
ফি’র রশিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ছবিটি তিনি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়া তিনি রিউমর স্ক্যানারকে আলোচিত ছবিটির লিংক শেয়ার করেন।
উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবির বেক গ্রাউন্ডে থাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যতীত বাকি সবকিছুর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
আলোচিত ছবিটি দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যম The Herald এ ২০১৭ সালের ৪ মে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেজা খান নামক এক ব্যক্তি দেশটির জলি গ্রুবার নামক স্থানে অগ্রাহকদের টয়লেটের সুবিধা না দেওয়া এবং টয়লেট ফি বেশি রাখায় সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Reeza Khan এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ২ মে তারিখে প্রকাশিত একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে টয়লেট সুবিধা গ্রহণের জন্য আলাদা ফি দিতে হয় কিনা এমন দাবির সত্যতা যাচাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট এবং দেশীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইন্টারনেটে তথ্যপ্রমাণসহ উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি তাদের নতুন ক্যাম্পাসে নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্কিং সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করেছে।
মূলত, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেট করার ফি’র রশিদের ছবি দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদিত। প্রকৃতপক্ষে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষার্থীর তৈরি মিম পোস্ট পরবর্তীতে সত্য দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটের ফি’র ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- Statement from Shumit Zaman
- HearldLive – News
- Reeza Khan – Facebook Post