সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মহাকাশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ নামের ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে থেকে ‘অ্যালবাট্রজ পাখি মাটি স্পর্শ না করেই জীবনের প্রথম ৬ বছর সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে কাটিয়ে দিতে পারে’ এ সম্পর্কিত একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে। এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।
একই দাবিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আর্টিকেল দেখুন এখানে, এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘অ্যালবাট্রজ জীবনের প্রথম ৬ বছর মাটিতে না নেমে উড়তে পারে’ শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ভূমি স্পর্শ না করলেও অ্যালবাট্রজ পাখিকে খাদ্য শিকারের জন্য নিয়মিত সমুদ্রপৃষ্ঠ স্পর্শ করতে হয়।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, Diomedeidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অ্যালবাট্রজ উড়তে পারে এমন পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাছ, কাকড়া, স্কুইডসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণীর খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। গড়ে প্রায় ৬০ বছর আয়ুসম্পন্ন অ্যালবাট্রজ পাখি জীবনচক্রের বেশিরভাগ সময় আকাশেই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু, খাদ্য শিকার এবং বংশবৃদ্ধির জন্য এদের ডাঙায় কিংবা সমুদ্রের পানিতে ফিরে আসতে হয়। মূলত, খাদ্য ছাড়া কোনো জীবের পক্ষেই ৬ বছরের মত দীর্ঘ সময় বাঁচা সম্ভব নয়। তাই খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক মাছ শিকার করতে সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণে বাধ্য হয় তারা। খাদ্য শিকার ছাড়াও সঙ্গীর খোঁজে এরা কিছু সময় ব্যয় করে। সঙ্গীর সাথে মিলিত হবার পর অ্যালবাট্রজ পুনরায় আকাশে উড়াল দেয়। মূলত, অ্যালবাট্রজ পাখির জীবদ্দশায় অধিকাংশ সময়ই উড়াল পথে ব্যয় হয়।

মার্চ থেকে জানুয়ারি হলো অ্যালবাট্রজ পাখির প্রজনন মৌসুম। জন্মের পর একটি অ্যালবাট্রজ পাখির প্রজননের জন্য তৈরি হতে কমপক্ষে ৬ বছর সময় লাগে। এই সময়টা তারা সমুদ্রের উড়াল পথেই কাটায়। প্রজনন সক্ষমতা অর্জনের পূর্বের এই সময়টিতে অ্যালবাট্রজ ভূমিতে নেমে আসে না- এই তথ্যটিকেই মূলত বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়ানো হচ্ছে।
অর্থাৎ, অ্যালবাট্রজ পাখি নিয়মিত বিরতিতে নিজের খাদ্য শিকারের উদ্দেশ্যে ভূমি কিংবা পানিতে অবতরণ করে। এছাড়াও, প্রজনন মৌসুম সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে তারা স্থলে(বিভিন্ন দ্বীপ) অবতরণ করে থাকে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালবাট্রজ টাস্ক ফোর্স ম্যানেজার আন্দ্রেয়া এঞ্জেলের বরাত দিয়ে জানায়, ‘যেহেতু অ্যালবাট্রজ খাদ্যের জন্য পুরোপুরি সামুদ্রিক প্রাণীদের ওপর নির্ভরশীল সুতরাং, তাকে খাবার গ্রহণের জন্য হলেও অবশ্যই সমুদ্রের পানিতে অবতরণ করতে হয়।’

এছাড়াও, রয়টার্স Cornell Lab of Ornithology’র চার্লস এল্ডারমিয়ার’র বরাত দিয়ে নিশ্চিত করে যে, অ্যালবাট্রজ পাখি খাদ্য শিকারের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে।

মূলত, অ্যালবাট্রজ পাখির প্রজনন সক্ষমতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম ৬ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। এই ৬ বছর প্রজননের প্রয়োজনে অ্যালবাট্রজ পাখির অবতরণের প্রয়োজন পরে না। উক্ত তথ্যকে কেন্দ্র করেই অ্যালবাট্রজ পাখি মাটি স্পর্শ না করে জীবনের প্রথম ৬ বছর আকাশে ওড়ে দাবি করে ইন্টারনেট প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রজননের প্রয়োজনে না হলেও খাদ্য গ্রহণের জন্য অ্যালবাট্রজ পাখিকে স্থল কিংবা সমুদ্রপৃষ্ঠ অবতরণ করতে হয়।
সুতরাং, ‘অ্যালবাট্রজ পাখি মাটি স্পর্শ না করে জীবনের প্রথম ৬ বছর আকাশে কাটিয়ে দেয়’ শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।