ফিলিস্তিনে তুরস্কের সামরিক সদস্য পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, তুর্কির সেনাবাহিনী চলে আসছে ফিলিস্তিনে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনে

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময়ে ফিলিস্তিনে তুরস্কের সেনাবাহিনী আসার নয় বরং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ট্রাকে করে সেনা সদস্য নিয়ে যাওয়ার ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Sarı Saçlım Mavi Gözlüm নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “Biz Ordusu Millet Olan Bir Ülkeyiz.” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Facebook

ভিডিওতে থাকা ক্যাপশনটি তুরস্কের ভাষায় লেখা ছিলো এবং ক্যাপশন শেষে তুরস্কের একটি পতাকার ইমোজি দেওয়া ছিলো। তুর্কিশ ভাষায় লেখা ক্যাপশনটির বাংলা অনুবাদ করলে হয় ‘আমরা এমন একটি দেশ যেখানে সেনাবাহিনী একটি জাতি’।

পরবর্তীতে ভিডিওটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে তুরস্ক ভিত্তিক গণমাধ্যম Yeniçağ এর ওয়েবসাইটে “Askerleri deprem bölgesine böyle taşıdılar” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ফিচার ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে ভুমিকম্প আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য ট্রাকে করে সামরিক সদস্যরা যাচ্ছিলেন।

পরবর্তীতে তুরস্ক, ফিলিস্তিনে সেনা পাঠাচ্ছে কিনা এই দাবির অনুসন্ধানে তুরস্কের গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবরে “Turkey ready to send Palestinians aid but ‘very difficult’ to deliver” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্ক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত।

এর আগে ১০ অক্টোবরে Reuters এ “Erdogan discusses Israeli-Palestinian conflict with regional leaders -presidency” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোগান ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, লেবানন, কাতার এবং মিশরের নেতাদের সাথে ফোনালাপে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং তুরস্ক ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে প্রস্তুত।

অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় এবং এটির সাথে ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। 

মূলত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে ভুমিকম্প আঘাত হানার পর সে দেশের সেনা সদস্যরা ট্রাকে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য যান। উক্ত ঘটনা নিয়ে সেসময় সেনা সদস্যদের ট্রাকে করে যাওয়ার ভিডিও যুক্ত করে তুরস্কের স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে ঐ ভিডিওকে ফিলিস্তিনে তুরস্কের সেনাবাহিনী আসার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷ 

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ফিলিস্তিনে তুরস্ক সামরিক সদস্য পাঠিয়েছে দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img