সম্প্রতি, “জাপানের একটি ক্ষেতে উৎপাদিত দুটি মুলা দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হাতে দাড়িয়ে থাকা অবিকল পায়ের প্রতিকৃতি তৈরী করলেন এক দম্পতি।” শীর্ষক শিরোনামে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন- এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
উক্ত পোস্টগুলোর আর্কাইভ- দেখুন, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাপানের ক্ষেতে উৎপাদিত মুলা দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের পায়ের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়নি এবং প্রচারিত ছবিগুলো আসল কোনো মুলার ছবি নয় বরং এটি ২০০৫ সালে কেনঝি সুয়েটসুগু নামের একজন জাপানি আর্টিস্ট এর তৈরি আর্টওয়ার্ক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষের পায়ের মতো দেখতে মুলার ছবিটির মূল উৎস অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে, প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ছবিটির মূল উৎস খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফেসবুকে গত ১৭ মার্চ Japan moments নামক একটি পেজ থেকে ‘Strange radish in Japan’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায় উক্ত ছবিটি মূলত কেনঝি সুয়েটসুগু (Kenji Suetsugu) নামক একজন জাপানি আর্টিস্টের তৈরি। তাছাড়া সেই পোস্টের ক্যাপশনে মূল আর্টিস্টের ইনস্টাগ্রাম আইডির লিংক ম্যানশন করা ছিল।

পরবর্তীতে, কেনঝি সুয়েটসুগু এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Instagram
কেনঝি সুয়েটসুগু এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, জাপানের ফুকুওকাতে পরাবাস্তব ভাস্কর্য, স্পেশাল মেকআপ ইফেক্টের কাজ করেন তিনি।
আইডির বায়োতে https://tsukurimono.com/ নামক একটি সাইট উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত সাইটেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সাইটে ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটিকে Daikonashi (2005) নামে অভিহিত করে এটি তৈরি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটির মূল অংশ ইউরেথেন এবং পাতার অংশটি আসল মুলার পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু ছবির ক্যাপশনে ছবিটি শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা অবিকল পায়ের প্রতিকৃতির মতো বা উক্ত অঙ্গভঙ্গি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি কিনা সে বিষয়টি উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে সাইটটির About সেকশন থেকে জানা যায়, এই সাইটটি মূলত কেনঝি সুয়েটসুগু এরই।

এই ছবির বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে কেনঝি সুয়েটসুগু এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,“শিল্পকর্মটি জাপানি অভিব্যক্তি ‘ডাইকোন-আশি’ এর উপর ভিত্তি করে ২০০৫ সালে আমি তৈরি করেছিলাম। ‘ডাইকোনাশি’ নারীর মোটা পা অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই মুলার সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি ভেবেছিলাম আসল পায়ের মতো একটি মূলা তৈরি করা আকর্ষণীয় হবে, তাই এটি তৈরি করেছি।”
মূলত, জাপানি এক্সপ্রেশন “daikon-ashi’ এর উপর ভিত্তি করে ২০০৫ সালে তৈরি একটি আর্টওয়ার্কের ছবিকে মুলা দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পায়ের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত আর্টওয়ার্কের সাথে শ্রীকৃষ্ণের পায়ের প্রতিকৃতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে শিল্পী সুয়েটসুগু রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং জাপানের ক্ষেতে উৎপাদিত মুলা দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পায়ের প্রতিকৃতি তৈরির দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Japan moments: Facebook Post
- Tsukurimono: Daikonashi (2005) / Produced at the request of “a realistic radish foot sculpture”. The root part is made of urethane, and the leaf part uses real radish leaves.
- Statement form Kenji Suetsugu.