সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার

সম্প্রতি, “সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

কী দাবি করা হচ্ছে?

প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সুনির্দিষ্ট তিনটি দাবি দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

দাবি ১

সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ ভেঙে গিয়ে এর উত্তর মেরুর চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে সূর্যের অংশটি ভেঙে খসে পড়ছে বলেও দাবি করেছে।

Screenshot source: Facebook

দাবি ২

নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সূর্যের এই ছবি পাঠিয়েছে।

Screenshot source: Ekattor  

দাবি ৩

ড. তামিথা স্কোভ নামে যে ব্যক্তি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সূর্যের সেই ছবিটি শেয়ার করেছেন, তিনি নাসার একজন কর্মকর্তা।

Screenshot source: Desh Rupantor

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, যমুনা টিভি, জনকণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, নিউজবাংলা২৪, আরটিভি, কালবেলা, বাংলা ভিশন, জুম বাংলা, আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক আমাদের সময়, ভোরের কাগজ, রিদ্মিক নিউজ, আমাদের সময়, দেশ রূপান্তর, ২৪লাইভ নিউজ পেপার, বাংলা ইনসাইডার, বৈশাখী টিভি, বিডি২৪রিপোর্ট, ঢাকা পোস্ট, বিজয় টিভি, প্রতিদিনের সংবাদ, একাত্তর টিভি, নাগরিক টিভি, রাইজিং বিডি, সময়ের আলো, সময় টিভি, ইনকিলাব, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জার্নাল, দৈনিক করতোয়া, বাংলাদেশ টুডে, বণিক বার্তা, বাহান্ন নিউজ, ডিবিসি নিউজ, স্টেট ওয়াচ, মাই টিভি, দৈনিক বাংলা, যায়যায়দিন, নিউজ২৪, কালের কণ্ঠ, একুশে সংবাদ, দৈনিক শিক্ষা, সোনালী নিউজ, নিউজজি২৪, দৈনিক জাগরণ, অর্থ সংবাদ।

Image collage: Rumor Scanner

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন NDTv, হিন্দুস্তান টাইমস, সংবাদ প্রতিদিন, ZEE ২৪ ঘন্টা

Screenshot source: Facebook

এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন NY Post (USA), news.com.au (Australia), Daily Star (UK)।

একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

Screenshot source: Facebook

একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে।
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।

Screenshot source: YouTube  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে শীর্ষক গণমাধ্যমের দাবিটি সঠিক নয় বরং সম্প্রতি সূর্যের প্রমিনেন্স বা প্লাজমা বিচ্ছিন্ন হয়ে সূর্যের উত্তর মেরুতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সূর্যের কোনো অংশই “ভাঙেনি”। প্লাজমার এই ঘটনা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তাছাড়া, ড. তামিথাকে নাসার কর্মকর্তা এবং ছবিটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটিও সঠিক নয়৷

তামিথা স্কোভ আলোচিত টুইটে কী বলেছেন?

ছড়িয়ে পড়া প্রতিবেদনগুলোর তথ্যের সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ড. তামিথা স্কোভ (Dr. Tamitha Skov) নামে এক নারীর টুইট। এই তথ্যের সূত্র ধরে টুইটারে তামিথা স্কোভের অ্যাকাউন্টে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি টুইট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Twitter

টুইটে তিনি লিখেছেন, “মেরুর ঘূর্ণি (polar vortex) সম্পর্কে বলি। উত্তরের প্রমিনেন্স (অঞ্চল) থেকে আসা উপাদান মূল ফিলামেন্ট থেকে ভেঙে দূরে সরে গেছে এবং এখন আমাদের নক্ষত্রের উত্তর মেরুতে একটি বিশাল মেরু ঘূর্ণিতে সঞ্চালিত হচ্ছে।”

প্রমিনেন্স এমন একটি গ্যাসীয় অঞ্চল যা অন্ধকার পটভূমিতে উজ্জ্বল দেখায় এবং ফিলামেন্ট সূর্যের উজ্জ্বল অংশের মধ্যে অন্ধকারাবৃত একটি অঞ্চল। তবে দুটো অঞ্চল একই ধরনের এবং এরা সূর্যের বায়ুমন্ডলের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা আটকে থাকা আর্ক প্লাজমার অংশ। প্রমিনেন্সকে তাই প্লাজমাও বলা হয়। 

অর্থাৎ, সহজ করে বললে, ফিলামেন্ট হচ্ছে খুব ঘন, শীতল গ্যাসের বিশাল অঞ্চল, যা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা আবদ্ধ থাকে। ফিলামেন্ট সাধারণত অন্ধকার দেখায়। কিন্তু যদি তারা সূর্যের “প্রান্তে” উপস্থিত হয় তবে তারা তাদের পিছনের অন্ধকার বাইরের স্থানের চেয়ে উজ্জ্বল দেখায়। তখন তাদের প্রমিনেন্স বলা হয়।

Screenshot source: UCAR

ড. তামিথার টুইটার অ্যাকাউন্টে একই বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারির অন্য এক টুইট (আর্কাইভ) থেকে জানা যায়, মেরুর এই ঘূর্ণি আনুমানিক ৬০° ডিগ্রি অক্ষাংশে মেরু প্রদক্ষিণে সময় নিয়েছে ৮ ঘন্টা।

Screenshot source: Twitter

স্পেস.কম এবং এনডিটিভি যখন খবরের সূত্র

ড. তামিথার দুইটি টুইটের পর মহাকাশ, জ্যোতির্বিদ্যাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘Space’ এর ওয়েবসাইটে গত ৫ ফেব্রুয়ারি একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “সৌর প্লাজমার একটি বিশাল ফিলামেন্ট সূর্যের পৃষ্ঠকে ভেঙে ফেলেছে এবং শক্তিশালী বাতাসের ঘূর্ণির মতো তার উত্তর মেরুকে প্রদক্ষিণ করছে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এটির কারণ জানেন না।”

Screenshot source: Space

প্রতিবেদনে মার্কিন ফেডারেল সরকার অর্থায়িত গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ‘National Center for Atmospheric Research (NCAR)’ এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড. স্কট ম্যাকিনটশ (Dr. Scott McIntosh) এর বরাতে বলা হয়, ৫৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে যে সৌর চক্র, সেটি একবার মেরুটির দিকে চলে যায় এবং তারপরে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং জাদুকরী ভাবে ঠিক একই অঞ্চলে তিন বা চার বছর পরে আবার ফিরে আসে। কেন এমন ঘটে সেটিই প্রশ্ন।

Screenshot source: Space 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত ভিডিওটি নেওয়া হয়েছে নাসার সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরি থেকে।

Screenshot source: Space

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখা যায়, অধিকাংশ গণমাধ্যম ‘Space’ এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘NDTV’ এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

আমরা NDTV এর ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ ভেঙে গিয়ে এর উত্তর মেরুর চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মহাকাশে ভ্রমণরত মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এই চিত্র।

Screenshot source: NDTV

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, Space এর প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওটি নাসার সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরির তোলা বলা হলেও NDTV বলছে, এটি নেওয়া হয়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে। 

ছবিটি কি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা?

টুইটে সূর্যের যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নিচের দিকে ‘SDO/AIA 304’ লেখা রয়েছে। পাশে তারিখ লেখা রয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।

Screenshot source: Twitter

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সরকারি সংস্থা ‘NASA’ এর ওয়েবসাইটে একই রকম ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

নাসার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, SDO (Solar Dynamics Observatory) হচ্ছে নাসার একটি সূর্য পর্যবেক্ষণ মিশন যেটি ২০১০ সাল থেকে কাজ করছে। 

SDO তিন ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে Atmospheric Imaging Assembly (AIA)। এটি সূর্যের পৃষ্ঠের পরিবর্তনগুলোকে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সাথে সংযুক্ত করতে একাধিক তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সৌর বায়ুমণ্ডলকে চিত্রিত করে।

Screenshot source: NASA

অর্থাৎ, সূর্যের ছবিটি নাসার SDO/AIA মিশন তুলেছে। 

কিন্তু গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি তুলেছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।

Screenshot source: Ekattor

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে কাজ শুরু করা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশে ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে বহু দূরে থাকা গ্যালাক্সি সন্ধান করে। সূর্যের গবেষণা করা বা এর ছবি তোলা টেলিস্কোপটির কাজের মধ্যে পড়ে না।

Screenshot source: NASA

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে আলোচিত ছবিটির উৎস সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

আসলে কী ঘটেছে সূর্যে?

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ক্রিয়েটর প্লাটফর্ম ‘Patron’ এ প্রকাশিত এক ভিডিও ব্লগ পোস্টে ড. তামিথা স্কোভ জানান, তার আলোচিত টুইটটি ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমগুলো সত্যকে খারাপভাবে বিকৃত করেছে।

Screenshot source: Patron

ব্লগ পোস্টে তিনি এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত তার ইউটিউব ভিডিওটি যুক্ত করেছেন, যেখানে তিনি গ্রাফিক্সের মাধ্যমে দেখিয়েছেন (০৪:০০ মিনিট সময় থেকে), প্রমিনেন্সের (অঞ্চল) উপাদান মূল ফিলামেন্ট থেকে কীভাবে দূরে সরে গেছে এবং সূর্যের উত্তর মেরুতে একটি মেরু ঘূর্ণিতে সঞ্চালিত হচ্ছে। 

একই ভিডিওর Description অংশে তিনি লিখেছেন, “মেরুর এই ঘূর্ণিটি এখন অনেক মিডিয়া আউটলেটে “সূর্যের একটি টুকরো ভেঙে যায়” হিসাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে তবে প্রচারটি বিশ্বাস করবেন না। এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং অত্যাশ্চর্য সৌর ব্যালেটের (solar ballet) অংশ! আবহাওয়ার দিকে ঘুরে, আমরা এখনও কিছু দ্রুত সৌর বায়ু থেকে নেমে আসা দেখছি যা আমাদের অল্প সময়ের জন্য ঝড়ের স্তরে নিয়ে যাবে এবং কিছু সুন্দর অরোরাকে মধ্য-অক্ষাংশে নিয়ে আসছে, তবে সপ্তাহান্তে এটি শান্ত হয়ে যাওয়ার কথা।”

Screenshot source: YouTube 

এ বিষয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন ড. তামিথা স্কোভ। এই পোস্টেও তিনি একই তথ্য দিয়েছেন এবং এও যোগ করেছেন যে উক্ত দৃশ্য পর্যবেক্ষণকৃত মহাকাশযানটিকে (SDO) নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। 

Screenshot source: Instagram

স্কোভ তার ইন্সটাগ্রাম পোস্টে একটি ছবিও যুক্ত করেছেন, যেখানে ল্যাপটপ স্ক্রিনে ‘Forbes’ এর একটি প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে। 

আমরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম Forbes এর ওয়েবসাইটে উক্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছি। 

গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনেও একই প্রসঙ্গ এসেছে।

Screenshot source: Forbes

ফোর্বস ড. তামিথা স্কোভের সাথে কথা বলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সূর্যের উপর একটি স্বাভাবিক ‘প্রমিনেন্স’কে অস্বাভাবিক কিছু করতে দেখা গেছে। এই প্রমিনেন্স বা প্লাজমা প্রায়শই সূর্য থেকে বেরিয়ে আসে। মোট সূর্যগ্রহণের সামগ্রিকতার পর্যায়ে খালি চোখেও তাদের দেখা সম্ভব।

ফোর্বস লিখেছে, ২ ফেব্রুয়ারিতে যা ঘটেছিল তা হল একটি প্রমিনেন্স বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে (অথবা স্কোভ দুর্ভাগ্যবশত এটিকে বর্ণনা করে “ভেঙে যায়”) তারপর সূর্যের উত্তর মেরুতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সূর্যের কোনো অংশই “ভাঙেনি”। প্লাজমার এই ঘটনা প্রতিদিনের ঘটনা। কিন্তু সূর্যের মেরু অঞ্চলের চারপাশে ফিলামেন্টটি ঘোরাফেরা করার বিষয়টি এটিকে একটি বিরল ঘটনা করে তোলে।

Screenshot source: Forbes

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পক্ষে সূর্যের এমন ঘটনার ছবি বা ভিডিও ধারণ কেন সম্ভব নয় তারও ব্যাখ্যা এসেছে ফোর্বসের প্রতিবেদনে। 

ফোর্বস জানিয়েছে, সূর্য থেকে স্থায়ীভাবে দূরে নির্দেশিত, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের একটি বিশাল এবং জটিল সূর্যের ঢাল রয়েছে যাতে কোনো সূর্যালোক অপটিক্সের কাছাকাছি যাওয়া বা এমনকি এর আলোকবিদ্যাকে সামান্য গরম করতে না পারে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে সূর্যের দিকে নির্দেশ করা হলে এর অপটিক্স সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তার পক্ষে সূর্যের ছবি তোলা সম্ভব নয়। 

ফোর্বস ড. স্কট ম্যাকিনটশের সাথে স্পেস.কম এর কথোপকথনের বিষয়েও উল্লেখ করেছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে ড. ম্যাকিনটশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলছিলেন,

“এটি একটি সাধারণ ঘটনা তবে ঘটনাটিকে দর্শনীয় করে তুলেছে মেরু ঘূর্ণির বৃত্তাকার প্রকৃতি” 

সূর্যের কোনো অংশ ভেঙ্গে পড়া সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি জানালেন, “সূর্যের মাধ্যাকর্ষন শক্তির টানে এরা খসে পড়া বা হারিয়ে যেতে পারে না। সূর্যের অন্য অংশেই চলে যায় যেমনটা এই ঘটনাতেও ঘটেছে।”

নাসার ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি ছবিতেও আমরা প্রায় একইরকম একটি ঘটনা দেখেছি, যেখানে সূর্যের প্রমিনেন্স বা প্লাজমার অগ্ন্যুৎপাত ধরা পড়েছে। নাসা বলেছে, এমন অগ্ন্যুৎপাত সূর্যের মাধ্যাকর্ষন শক্তির জন্য আবার সূর্যের মধ্যেই ফিরে আসে।

Screenshot source: NASA

ড. তামিথা স্কোভ কি নাসার কর্মকর্তা?

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে ড. তামিথা স্কোভকে নাসার কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করা হয়েছে।

Screenshot source: Google

কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, ড. তামিথা স্কোভ তার টুইটার অ্যাকাউন্টের বায়ো’তে নিজেকে একজন স্পেস ওয়েদার পদার্থবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং নাসাসহ বেশ কিছু সংস্থার টেলিভিশনকে ট্যাগ করে রেখেছেন। 

ড. তামিথার ‘Space Weather Woman’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি NASA সহ বেসামরিক এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলোর জন্য প্রস্তাব পর্যালোচনা এবং আউটরিচ প্যানেলের অফিসিয়াল ক্ষমতায় কাজ করেন। 

পরবর্তীতে আমরা তার লিংকডইনের প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘Millersville University of Pennsylvania’-এ প্রফেসর হিসেবে এবং ‘American Meteorological Society’-তে Exploratory Committee for Space Weather Certifications পদে কাজ করছেন। তাছাড়া তার পূর্বের কর্মস্থলগুলোর তালিকাতেও নাসার নাম উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Screenshot collage: Rumor Scanner

অর্থাৎ, ড. তামিথা স্কোভকে নাসার কর্মকর্তা বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।

মূলত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্পেস ওয়েদার পদার্থবিদ ড. তামিথা স্কোভ তার টুইটার অ্যাকাউন্টে করা টুইটে জানান, সূর্যের উত্তরের প্রমিনেন্স (অঞ্চল) থেকে আসা উপাদান মূল ফিলামেন্ট থেকে ভেঙ্গে দূরে সরে গেছে এবং এখন সূর্যের উত্তর মেরুতে একটি বিশাল মেরু ঘূর্ণিতে সঞ্চালিত হচ্ছে। এই তথ্যকে গণমাধ্যমে সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, সূর্যের একটি প্রমিনেন্স বা প্লাজমা বিচ্ছিন্ন হয়ে সূর্যের উত্তর মেরুতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সূর্যের কোনো অংশই “ভাঙেনি”। প্লাজমার এই ঘটনা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তাছাড়া, ড. তামিথাকে নাসার কর্মকর্তা এবং ছবিটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বলে যে দাবি করা হচ্ছে তাও সঠিক নয়।

সুতরাং, সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

সংশোধন / Correction

০৭ জুলাই, ২০২৩ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়েও কতিপয় গণমাধ্যমে একই দাবি প্রচার করার প্রেক্ষিতে সেসব গণমাধ্যমকেও দাবি হিসেবে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img