সম্প্রতি “নির্বাচনের পূর্ব রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সাইকোপ্যাথ প্যাথলজিকাল লায়ার কতৃক বানানো স্মার্ট বাংলাদেশে মার্কেটের কার্পেট দিয়ে শীত নিবারন করছে উন্নয়নের রোল মডেলের এক ডিজিটাল শিশু।” “নেতাদের স্মার্ট বাংলাদেশ।” “আহ্ আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ 😭
শিতার্ত মানুষ শীত নিবারনের জন্য কার্পেট নামের পাপোষ ব্যবহার করছে।” “এই তো আমাদের প্রজন্ম ,থাকার জায়গা নেই ,খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই ,মাথার ওপর অভিবাবক ও নেই। পথে ছুড়ে দেয়া মলিন কার্পেট ই তার ভরসা। এই তীব্র শীতে নিজের শরীরের অবশিষ্ট তাপ দিয়ে শীতল কংক্রিটকে গরম করে সেই রাস্তার কার্পেটের নীচেই তার এই অসামান্য শীতনিদ্রা। এটাই তো স্মার্ট বাংলাদেশ।” শীর্ষক শিরোনামের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি বাংলাদেশের নয় বরং ২০২০ সালের জুন মাসে মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরে পথশিশুর ছবি দাবিতে এটি ইন্টারনেটে প্রথম প্রচারিত হয়েছিলো।
অনুসন্ধানে, Abderrahim Belechekar Benali নামক ফেসবুক আইডি থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন উক্ত ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ব্যক্তি একজন মরক্কোর নাগরিক এবং সে দেশের একজন সংবাদকর্মী।
উক্ত পোস্টের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, এটি মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরে শীতকালে একজন অভিবাসী শীতার্ত শিশুর ছবি। শিশুটির এ অবস্থার ছবি দেখে উক্ত ব্যক্তি সামাজিক সংস্থাগুলোকে দায়ী করেন এবং সমালোচনা করেন।
উক্ত ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট করা মরক্কোর সাংবাদিক Abderrahim Belechekar Benali এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়।
তবে এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের প্রশ্নের উত্তর দেননি সাংবাদিক Abderrahim.
এছাড়াও, উক্ত ছবিটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিশিয়ায় তোলা ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
সেসময় সৌদি আরবের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Misbar ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর “The picture is old and not of a Tunisian child lying on the ground” শীর্ষক শিরোনামের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ছবিটি মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরে তোলা। এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়, টাঙ্গিয়ারে পথশিশুর আধিক্য বেশি কেননা নিরাপদ অভিবাসনের তাগিয়ে ইউরোপ থেকে এ শহরে প্রচুর শিশু অনুপ্রবেশ করে।
যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত ছবিটি বাংলাদেশের কোনো পথশিশুর ছবি নয় বরং এটি মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরের একটি অভিবাসী পথশিশুর ছবি।
মূলত, আলোচিত ছবিটি ২০২০ সালের জুন মাসে মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরে পথশিশুর ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রথম প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে এটি তিউনিশিয়ার রাজধানীর ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিসবার ছবিটি তিউনিসিয়ার ছবি নয় বলে নিশ্চিত করে। সম্প্রতি আলোচিত একই ছবিটিকে বাংলাদেশের ফুটপাতে কার্পেটের নিচে শিশুর শীত নিবারণের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরের শীতার্ত পথশিশুর ছবিকে বাংলাদেশের ফুটপাতে কার্পেটের নিচে শিশুর শীত নিবারণের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- ফেসবুক একাউন্ট : Abderrahim Belechekar Benali
- মিসবার : The picture is old and not of a Tunisian child lying on the ground