শহীদ ডট ইনফো সাইটে নোবিপ্রবির জীবিত শিক্ষার্থীকে মৃত দাবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে অন্তত চার শতাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে। গত ২২ জুলাই মৃত্যুর তথ্যগুলো ডাটাবেজ আকারে রাখতে ইন্টারনেটে একটি উদ্যোগের খবর প্রকাশ্যে আসে। শহীদ ডট ইনফো নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই সংঘাতে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় যুক্ত করার এই উদ্যোগে অল্প সময়েই সাড়া ফেলে। 

তবে রিউমর স্ক্যানারের নজরে আসে, এই সাইটে মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্যও প্রচার করা হচ্ছে৷ সাইটটিতে দাবি করা হচ্ছিল, তিনি মারা গেছেন গত ১৮ জুলাই। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি সাইটটিতে।

শহীদ ডট ইনফো

উক্ত দাবি সম্বলিত শহীদ ডট ইনফোর এ সংক্রান্ত তথ্যের আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী জাহিদুল নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাহিদুলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তার পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি মারা যাননি। শহীদ ডট ইনফো সাইটে তার তথ্য দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে শহীদ ডট ইনফো সাইটে বর্তমানে জাহিদুলের বিষয়ে তথ্য পাওয়া না গেলেও একাধিক আর্কাইভ সংস্করণে জাহিদুলের বিষয়ে তথ্য ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

সাইটটি ঘুরে একটি ফরম পাওয়া যায় যেখানে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এই ফরমের মাধ্যমে নাম, বয়স, প্রতিষ্ঠানসহ মৃত্যু সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তবে কেউ তথ্য দেওয়ার পর তা কোন প্রক্রিয়ায় যাচাই করা হয় তা উল্লেখ করা হয়নি এই সাইট বা ফরমটিতে। সাইটটির নামে ফেসবুকে একটি পেজ পেয়েছি আমরা।  গত ২৩ জুলাই চালু হওয়া পেজটিতে সেদিনই এক পোস্টে ফরমটির বিষয়ে জানানো হয়। এর আগের দিন সম্ভাব্য প্রথম এ বিষয়ে পোস্ট করা হয় ফখরুল ইসলাম শুভ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। এই দুই পোস্টের কোনোটিতেই ফরম থেকে পাওয়া তথ্যের পরবর্তী যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে শহীদ ডট ইনফো ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ওয়েবসাইটটির ডোমেইন গত ২২ জুলাই রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। 

এদিকে নোবিপ্রবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা রাহি রহমান রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, এই আন্দোলনে নোবিপ্রবির কোনো বর্তমান শিক্ষার্থী নিহত হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের একজন গুলিবিদ্ধ হলেও তিনি এখন সুস্থ আছেন।

মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের  গত ২২ জুলাই মৃত্যুর তথ্যগুলো ডাটাবেজ আকারে রাখতে শহীদ ডট ইনফো নামে একটি ওয়েবসাইট চালু হয়। এই সাইটে মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য প্রচার হচ্ছিল৷ তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, জাহিদুল বা নোবিপ্রবির কোনো শিক্ষার্থীই সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত হননি। 

সুতরাং, শহীদ ডট ইনফো সাইটে কোটা আন্দোলনে নোবিপ্রবির জীবিত শিক্ষার্থীকে মৃত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img