ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য দাবিতে পুরোনো ও সম্পাদিত ভিডিও প্রচার

গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও ভারতে আশ্রয় গ্রহণের পর থেকে পরিবর্তিত পটভূমিতে বিভিন্ন তথ্য-অপতথ্যের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘৫ই আগস্টের পর সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদান করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদান করেছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। মূলত, পুরোনো একটি ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার বক্তব্যের সাম্প্রতিক একটি অডিও প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়টি অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করা হলে এতে বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন এর লোগো লক্ষ্য করা যায়৷ 

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ভাষণ’ শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। একইসাথে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্টেও একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করে। 

তবে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেল ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড চ্যানেলে পাওয়া ২০২৩ সালের ভিডিও এবং আলোচিত দাবির ভিত্তিতে প্রচারিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, উভয় ভিডিওতে গঠনগত পার্থক্য বিদ্যমান। মূলত, ২০২৩ সালের মূল ভিডিওতে ‘মিরর ইমেজ এফেক্ট’ ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে, মূল ভিডিওতে ডানপাশে থাকা সকল বস্তু আলোচিত ভিডিওতে বামপাশে এবং বামপাশে থাকা সকল বস্তু ডানপাশে অবস্থান করছে।

অতঃপর, ভিডিওগুলোতে থাকা অডিও বা শব্দ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ২০২৩ সালের মূল ভিডিওর অডিও থেকে আলোচিত ভিডিওটির অডিও ভিন্ন।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির অডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে, HAB TV Online নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা | ভার্চুয়াল বৈঠকে কী বললেন?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির অডিও অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির অডিওর হুবহু মিল রয়েছে। মূলত, উক্ত ভিডিওটির অডিও অংশকে উল্লিখিত ২০২৩ সালের ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷ 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ পোস্টে থাকা একাধিক ছবির সাথে উল্লিখিত ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে থাকা পারিপার্শ্বিকতা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করা যায়, ভিডিওটি ও এতে থাকা অডিও বার্তা ১৯ জানুয়ারিতে সিউলে দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় ধারণকৃত। 

এছাড়া, ১৯ জানুয়ারির উক্ত প্রতিবাদ সভায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তব্য প্রদানের অডিওটি গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। 

উপরিউক্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিশ্চিত করা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ভিডিও অংশটি সাম্প্রতিক নয়, এটি ২০২৩ সালের একটি ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে; এবং অডিও অংশটি গত ১৯ জানুয়ারির একটি ভার্চুয়াল বক্তব্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷ 

সুতরাং, সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান দাবিতে তার ২০২৩ সালের ভাষণের একটি ভিডিওতে তার গত ১৯ জানুয়ারির একটি ভার্চুয়াল বক্তব্যের অডিও প্রতিস্থাপন করে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পাদিত৷ 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img