সম্প্রতি, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে শেখ হাসিনা সদৃশ এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আমি এক মহা খুনি। আজ আমি মতিউর রহমান রেন্টুর সাথে গলা মিলিয়ে বলতে চাই, আমার ফাঁসি চাই। আমি চাই রাস্তার মোড়ে আমাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি কাস্টে ঝুলিয়ে হত্যা করা হোক। এই জাতিকে পাপমুক্ত করা হোক।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের ফাঁসির দাবিতে শেখ হাসিনার কথিত বক্তব্যের ভিডিওটি আসল নয়। বরং, ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৩ সালে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিডিও বিকৃত করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২ মে ‘ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার’ প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে শেখ হাসিনার পোশাক ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করা যায়। তবে মূল সাক্ষাৎকারের সম্পূর্ণ ভিডিওতে শেখ হাসিনা নিজের ফাঁসির দাবিতে কোনো বক্তব্য দেননি।
২০২৩ সালের ১ মে এনটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে একটি সাক্ষাৎকার দেন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বিএনপি ও তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও সাংবাদিক হয়রানি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তবে, নিজের ফাঁসির দাবিতে কোনো বক্তব্যের উল্লেখ প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের ২ মে যুগান্তরের ওয়েবসাইটেও এই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তবে সেখানেও শেখ হাসিনার এমন কোনো মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে থাকা কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার স্বাভাবিক কণ্ঠের অমিল, কথা বলার সময় মুখের অভিব্যক্তি ও বাচনভঙ্গি কৃত্রিম মনে হওয়াসহ আরও কিছু অসংগতি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব লক্ষণ সাধারণত এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি ভিডিওতে দেখা যায়। ফলে, এটি একটি ডিপফেক ভিডিও বলে প্রতীয়মান হয়।
ডিপফেক হল বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআইI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।
সুতরাং, নিজের ফাঁসির দাবিতে শেখ হাসিনার কথিত বক্তব্যের ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।