গত কয়েকদিন ধরে ‘শারীরিক সম্পর্ক করার সময় আটকে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ান নারীর মৃত্যু ঘটেছে’ শীর্ষক দাবি সম্বলিত একাধিক ভিডিও নেট দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশেই উক্ত দাবিতে ভিডিওগুলো প্রচারিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেই শুধু ফেসবুকে ভিডিওগুলো দেখেছে কয়েক কোটি মানুষ।
‘Sayed Mahmud’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “ঘটনাটা সম্ভবত ইন্দোনেশিয়াতে ঘটেছে। ছেলে মেয়ে সহবাস করতে গিয়ে একে ওপর থেকে নামতে পারতেছে না, ফলে মেয়েটার প্রচুর পরিমাণ রক্তকরণে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।” শিরোনামে (আর্কাইভ) প্রচারিত একটি ভিডিওই এখন অবধি ১ কোটি ২০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।

একই ঘটনায় ভিন্ন ফ্রেমে ধারণকৃত আরও দুটি ভিডিও এখন পর্যন্ত দেখা হয়েছে যথাক্রমে ২ কোটি ১০ লাখ এবং ৩০ লাখ বার।

ইউটিউবে ‘পরকীয়া করতে গিয়ে গোপনাঙ্গ আটকে গেছে’ শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছু পোস্টে কেবল মেয়েটি মারা গেছে বলা হলেও, কিছু পোস্টে উভয়ই মারা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে বাস্তবেই কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে? নাকি ভুয়া ভিডিওতেই বোকা বনেছে কোটি কোটি মানুষ? অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শারীরিক সম্পর্ক করার সময় আটকে গিয়ে নারী-পুরুষের মৃত্যু দাবিতে ভাইরাল ভিডিওগুলো বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং এটি অভিনয়ের মাধ্যমে তৈরি একটি কাল্পনিক ঘটনার ভিডিও। Team PSS নামের ইন্দোনেশিয়ার একটি কনটেন্ট ক্রিয়েটর টিম এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলো তৈরি করে তাদের একাধিক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে প্রচার করে৷ পরবর্তীতে যা বিভিন্ন দেশে সত্য ঘটনার ভিডিও হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে Gubes Mamaz Karyo নামের প্রায় ১৭ লাখ সাবস্ক্রাইবারের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত চ্যানেলে অনুসন্ধানে এই ঘটনার ওপর ১০টিরও বেশি এপিসোড/ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এ সংক্রান্ত প্রথম ভিডিওটি “Brothers and Sisters of Blood Shame Your Family, Nauzubillah (অনূদিত)” শিরোনামে আপলোড করা হয় গত ৯ মে। এরপর পর্যায়ক্রমে ঘটনা পরিক্রমার পরবর্তী ভিডিওগুলো প্রকাশ করা হয়।
উক্ত ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও তাদের আরও একাধিক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওগুলো পোস্ট করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে BOSS PSS ইউটিউব চ্যানেল এবং Gubes Mamas Karyopss নামের ফেসবুক পেজ। এই ভিডিও কনটেন্টগুলো দ্রুতই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় এবং পরবর্তীতে তাদের ভিডিও নেটিজেনরা ডাউনলোড করে খণ্ড খণ্ড অংশ সত্য ঘটনা হিসেবে ধরে প্রচার করে। ফলশ্রুতিতে ভিডিওগুলো আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে টিম Padepokan Sendang Sejagadt (সংক্ষেপে Team PSS) এর ‘Gubes Mamaz Karyo’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর ডেসক্রিপশন বক্সে ডিসক্লেইমার দেখতে পাওয়া যায়৷ ভিডিওগুলোর ডেসক্রিপশনে তারা ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ কাল্পনিক হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছে– “উপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং এটি বিনোদনমূলক শিক্ষার ভিডিও, অনুগ্রহ করে ইতিবাচক দিকটি নিন এবং নেতিবাচক দিকটি পরিত্যাগ করুন” (অনূদিত)। এছাড়াও ভিডিওর শেষেও “THIS VIDEO IS ONLY FICTIONAL AND IS FOR ENTERTAINMENT AND EDUCATIONAL NATURE, TAKE THE POSITIVE SIDE AND DISCARD THE NEGATIVE SIDE AND SORRY IF THERE ARE MISTAKES IN THE NAME & PLACE(অনূদিত)” লিখে ডিসক্লেইমার দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে টিম পিএসএস এর সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ তাদের অফিশিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগ করে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা ভাইরাল ভিডিওগুলোকে কাল্পনিক ঘটনার ওপর তৈরি ভিডিও বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।
আরো পড়ুনঃ ভিডিওটি ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্যের নয়
তাদের ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এই কনটেন্ট ক্রিয়েশন টিম নানা রকম কনটেন্ট তৈরি করে থাকে৷ এরমধ্যে প্যারানরমাল, ব্লাক ম্যাজিকসহ নানান ফিকশনাল গল্পের ওপর কনটেন্ট উল্লেখযোগ্য। উক্ত ইউটিউব চ্যানেলের অন্যান্য ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে ভাইরাল ভিডিওতে অভিনয় করা কয়েকজনকে তাদের অন্যান্য ভিডিওতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ, ইন্দোনেশিয়ার একদল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের অভিনয়ের মাধ্যমে তৈরি কাল্পনিক ভিডিওকে আসল ঘটনা ভেবে প্রচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কারো মৃত্যু হয়নি কিংবা বাস্তবে এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
সুতরাং, অভিনয়ের মাধ্যমে তৈরি কাল্পনিক ঘটনার ভিডিওকে ইন্দোনেশিয়ায় শারীরিক সম্পর্ক করতে গিয়ে আটকে গিয়ে নারী-পুরুষের মৃত্যু দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner Investigation
- Statement of the creator team
- Creator’s YouTube Channel