সম্প্রতি, “সৌদি আরবের সাবেক বাদশা আবদুল্লাহ এর অর্থায়নে নির্মিত নতুন নান্দনিক মডেল মসজিদ আজ দেশের অনেক উপজেলায় উদ্বোধন হলো। ইতোপূর্বে অনেকটি উদ্বোধন হয়েছিল এবং সামনে আরও উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ সৌদি সরকারকে আমাদের দেশে এমন সুন্দর মসজিদ উপহার দেয়ার জন্য।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে সারাদেশে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে সৌদি আরব সরকার কোনো অর্থায়ন করেনি বরং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নেই উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে ২০১৭ সালের ১৮ মে “Confusion over KSA $1b fund to build 560 mosques” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ফক্স নিউজের বরাতে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে সৌদি সরকারের অর্থায়ন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দাবির প্রসঙ্গে সৌদির তৎকালীন সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রী আওয়াদ আল-আওয়াদের একটি মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। ডেইলে স্টারে উল্লিখিত সৌদি মন্ত্রীর মন্তব্যটি নিম্নরূপঃ
“This is simply not true. Saudi Arabia has never committed such funding for the mosque-building project. Any commitment by the Saudi government of this nature would only be considered after receiving an official request from the host country’s government. When such an agreement is finalized there would definitely be an official announcement by both countries,”
ইংরেজি এই মন্তব্যটি বঙ্গানুবাদ করলে যা দাঁড়ায়,
“এটি সত্য তথ্য নয়। সৌদি আরব মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে এ ধরনের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। সৌদি সরকার এই প্রকৃতির যেকোনো প্রতিশ্রুতি সাহায্য প্রার্থী রাষ্ট্রের কাছ অনুরোধ পাওয়ার পর বিবেচনা করবে। যখন এই ধরনের একটি চুক্তি চূড়ান্ত হবে তখন অবশ্যই উভয় দেশের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হবে।”
২০১৭ সালের ১০ মে সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রী আওয়াদ আল-আওয়াদ বক্তব্যে বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কোন এক অজ্ঞাত কারণে ফক্স নিউজ সরিয়ে নিলেও ( সংবাদটির URL দেখুন এখানে ) ডেইলি স্টার সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ এখনো রয়েছে, দেখুন এখানে এবং এখানে।
মূলত, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের সময় বাংলাদেশ সরকারের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির প্রকল্পে অর্থায়ন করার ব্যাপারে সৌদি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ আগ্রহ প্রকাশ করে বলে বাংলাদেশ সরকার সূত্রে জানা যায়। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের এক বছর পেরিয়ে যাবার পর ২০১৭ সালে হঠাৎ করেই বাংলাদেশের দাবি প্রত্যাখ্যান করে দেশটির তৎকালীন সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রী আওয়াদ আল-আওয়াদ জানান, “সৌদি আরব এ ধরনের মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।” পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের ৫৬০টি মসজিদের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালে ৫০ টি এবং গত ১৬ জানুয়ারি আরো ৫০ টিসহ এখন পর্যন্ত মোট ১০০ টি মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সরকারের মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে সৌদি সরকার অর্থায়ন না করলেও সম্প্রতি ৫০ টি মডেল মসজিদউদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে ‘সম্প্রতি উদ্বোধনকরা মডেল মসজিদগুলো সৌদি সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে উক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালেও মডেল নির্মাণ প্রকল্পে সৌদির অর্থায়নের দাবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছিল। সেসময় বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
তথ্যসূত্র
- বিডিনিউজ২৪- আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
- ভোরের কাগজ- সৌদি নয়, ৫৬০ মডেল মসজিদ সরকারি অর্থায়নে