সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইটেক এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইটেক এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যোগদানের দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ব্যতীত উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। তাছাড়া, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক এন্ড টেকনোলজি নামে কোনো বিভাগও নেই।
দাবিটির সূত্রের খোঁজে
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিটির সূত্রপাত খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এক্ষেত্রে ফেসবুক মনিটরিং টুল ছাড়াও একাধিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে আমরা দেখেছি গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ৪৪ মিনিটে এ বিষয়ে প্রথম পাবলিক পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয় ফেসবুকে। Miah Mohammad Zakaria নামে এক ব্যক্তি সেসময় তার করা আলোচিত পোস্টে জয়ের ছবি ব্যবহার করে দাবি করেন, “আমেরিকার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইটেক এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অনাদারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলেন সজিব ওয়াজেদ জয়।” (বানান অপরিবর্তিত)
লক্ষ্য করুন, জনাব জাকারিয়া তার পোস্টের ক্যাপশনে অনাদারি নামক একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। তবে এই শব্দটি আসলে কী বোঝাচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। কিওয়ার্ড সার্চে দেখা যাচ্ছে, অনাদারি শব্দটি দেনা পাওনার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদের সাথে এই শব্দের সংশ্লিষ্টতা প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হয়নি আমাদের কাছে। পরবর্তীতে আমরা এই শব্দটির কাছাকাছি কিছু শব্দ যেমন অনাদায়ী, অনারারি ইত্যাদির সাথে উক্ত পদের সংশ্লিষ্টতা বিশ্লেষণে অনারারি শব্দটি সবচেয়ে উপযুক্ত বলে প্রতীয়মান হয়েছে আমাদের কাছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনারারি অধ্যাপক পদ রয়েছে। এই পদে সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হয়। উক্ত দাবিতেও তাই এই শব্দটিই ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন পোস্টদাতা, এমনটা ধারণা করা অমূলক নয়।
তবে বিষয়টি যখন পরদিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ভাইরাল হতে শুরু করে তখন দাবিটি কিছুটা পরিবর্তন হয়ে অনাদারি (অনারারি) শব্দটি বাদ দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হাইটেক এন্ড টেকনোলজি নামে বিভাগ রয়েছে?
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। মূল ক্যাম্পাসটি নিউইয়র্কে হলেও বাকি দুইটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। একটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে। অন্যটি চীনের সাংহাইতে। এই তিন ক্যাম্পাসের অধীনে একাধিক স্কুল এবং কলেজ রয়েছে যেগুলোতে একাধিক অনুষদ এবং বিভাগে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে থাকে।
রিউমর স্ক্যানার টিম এসকল অনুষদের অধীনে থাকা বিভাগের বিষয়ে যাচাই করে ‘হাইটেক এন্ড টেকনোলজি’ নামে কোনো বিভাগের অস্তিত্ব পায়নি।
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন?
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বিষয়টিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টেও বিষয়টিকে গুজব বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া, ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাতের এক ফেসবুক পোস্ট থেকেও উক্ত দাবিটি সঠিক নয় বলে জানানো হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইটেক এন্ড টেকনোলজি নামক একটি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক এন্ড টেকনোলজি নামে কোনো বিভাগ নেই। তাছাড়া, উক্ত দাবিটিকে ভুয়া বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুতরাং, সজীব ওয়াজেদ জয় নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইটেক এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Shah Ali Farhad
- Mohammad A. Arafat: Facebook Post
- Bangladesh Awami League: Facebook Post
- Rumor Scanner’s own investigation