প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দাবিতে ছড়ালো গুজব 

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে নিষেধাজ্ঞা, নতুন নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, নতুন নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

 নিষেধাজ্ঞা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবিটি মিথ্যা এবং আবার নতুন নির্বাচন দেওয়ারও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন প্রসঙ্গের কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে। 

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে দুইটি সংবাদ প্রতিবেদন রয়েছে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদকে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ার দুইটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়। 

ভিডিও যাচাই-১

শুরুতে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে উপস্থাপকের পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জানুয়ারি “বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গঠন করা হয়েছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ১৬ জানুয়ারি বিএনপিপন্থি আইনজীবী ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে করা সংবাদ প্রতিবেদন এটি। আইনজীবী ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গঠন করা হয়েছে; একইসাথে অসাংবাধিনাকি।

এখানে প্রধানমন্ত্রীর ও সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, নতুন নির্বাচন নিয়েও কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি৷ 

ভিডিও যাচাই-২

এই অংশেও একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করতে দেখা যায়। প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে এটিএন বাংলা এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জানুয়ারি “ভোটের সঠিক হার জানতে চায় ইইউর বিশেষজ্ঞ দল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দল। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) পক্ষ থেকেও একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে করা সংবাদ প্রতিবেদন এটি। এখানেও আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই-৩

এই অংশে একজন উপস্থাপককে সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে শোনা যায়। সেই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Nagorik TV নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ জানুয়ারি “ভূমিদস্যু বসুন্ধরার শাহ আলমকে পুরস্কৃত করা সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন জনগণের পক্ষ নেবেন কি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সম্প্রতি সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদের কার্যক্রম নিয়ে নিজের মনগড়া কিছু তথ্য উপস্থাপন করছেন উপস্থাপক। তবে, আলোচিত দাবিগুলো সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেনি। এছাড়া এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্যও অনলাইনে পাওয়া যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৪

এই অংশের ভিডিওটিতে একজনকে সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সমালোচনা করতে শোনা যায়। তবে, এখানে তিনি নিষেধাজ্ঞা বা নতুন করে নির্বাচনের নির্দেশ সংক্রান্ত কোনো কথা বলেননি এবং কোনো তথ্যও উপস্থাপন করেননি। 

এছাড়া, আলোচিত দাবিগুলো অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে নিষেধাজ্ঞা, নতুন নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন দুইটা ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন এবং ভিন্ন দুইটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে নিষেধাজ্ঞা, নতুন নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ- শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img