সম্প্রতি, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার জারির দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জারি করারও কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ০১ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২ মিনিট ০৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রমের পুরোনো কিছু ছবি দেখানো হয়েছে।
ভিডিওটিতে বলা হয়, “এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলেন নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এজন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, প্রয়োজন পড়লে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।”
উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ছাড় দেওয়া হবে না: মো. সাহাবুদ্দিন’ শীর্ষক শিরোনামে সেসময়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ছাড় না দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশের দাবি সংক্রান্ত তথ্যও আলোচিত ভিডিওতে অনুপস্থিত।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষাপটে গত ০১ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জারির দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জারি শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ছাড় দেওয়া হবে না: মো. সাহাবুদ্দিন
- BBC: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা
- Rumor Scanner’s Own Analysis