কুবি শিক্ষার্থীদেরকে ঢাবি ও বদরুন্নেসার ছাত্রী দাবি করে কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রোপাগাণ্ডা 

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে, ঘটে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। পরবর্তীতে গত ২১ জুলাই কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেয় আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে ২৩ জুলাই কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এরই প্রেক্ষিতে “দাবী মেনে নেবার পরও আন্দোলন নেপথ্যে শিবির ও ছাত্রীসংস্থা” শীর্ষক দাবিতে মিছিলের ছবি সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবি করা হচ্ছে, প্রচারিত ছবিটিতে থাকা চিহ্নিত চারজনের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং একজন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজেরর শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই শিবির ও ছাত্রী সংস্থার সদস্য এবং ছবিটি সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরের আন্দোলনের।

উক্ত ব্যানার যুক্ত  ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ডিজিটাল ব্যানারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত সঞ্জিত চন্দ্র দাসকেও পোস্ট করতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিজিটাল ব্যানারের ছবিতে চিহ্নিত চার শিক্ষার্থীর কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নন বরং, এই চার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলের এই ছবিটি আদালত কর্তৃক কোটা সংস্কারের রায় ঘোষণার ১০ দিন পূর্বের।

আলোচিত ছবিটির বিষয়ে জানতে কি ওয়ার্ড সার্চের করে জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে গত ১১ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনের ৪০ সেকেন্ডের পরের একটি মুহূর্তের সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Image Comparison By Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে রওনা দিলে কোটবাড়ি আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন জায়গায় পুলিশ বাধা দেয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা পেরিয়ে প্রায় ছয় ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ রাখে।

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি গত ১১ জুলাই এর। যা কোটার সংস্কার নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের অন্তত ১০ দিন আগের মিছিলের।

পরবর্তীতে ডিজিটাল ব্যানারে দাবিকৃত শিবির ও ছাত্রী সংস্থার বিভিন্ন পদধারী বলে চিহ্নিত চার শিক্ষার্থীর পরিচয় খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

আলোচিত ডিজিটাল ব্যানারে এই শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী বলে দাবি করা হলেও মিছিলের ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক ও উক্ত শিক্ষার্থীদেী সাথে কথা বলে জানা যায়, ছবিতে চিহ্নিত চারজনই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।

নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উক্ত চার শিক্ষার্থী রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ওইদিন (১১ জুলাই) আমাদের ভাইদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আমরা মিছিলে গিয়েছিলাম। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। 

অর্থাৎ, ঢাবি এবং বেগম বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সংস্থার বিভিন্ন পদধারী শিক্ষার্থী দাবিতে প্রচারিত দাবিটিও সঠিক নয়।  

দৈনিক জনকণ্ঠ এর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইকবাল হাসান বলেন, ছবিটি আসলে গত ১১ জুলাইয়ের কুমিল্লা কোটবাড়ির খানবাড়ি নামক একটি জায়গার। এটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলের দৃশ্য। এখানের সবাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

দৈনিক আজকের পত্রিকা এর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান তনয় বলেন, ছবিটি ১১ জুলাইয়ের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলের ছবি। এখানে মার্ক করা যারা আছেন তারা কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী নয়। তারা সবাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “দাবী মেনে নেবার পরও আন্দোলন নেপথ্যে শিবির ও ছাত্রীসংস্থা” শীর্ষক দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, প্রচারিত ছবিটিতে চিহ্নিত চারজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিবির ও ছাত্রী সংস্থার সদস্য এবং ছবিটি সরকার কর্তৃক আন্দোলনকারীদের কোটা সংস্কার দাবি মেনে নেওয়ার পরের আন্দোলনের। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি গত ১১ জুলাই কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলের। যা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ১০ দিন আগের। এছাড়া, ঢাবি এবং বদরুন্নেসা কলেজের শিবির এবং ছাত্রী সংস্থার শিক্ষার্থী দাবিতে চিহ্নিত চার শিক্ষার্থী ঢাবি এবং বেগম বদরুন্নেসা কলেজের নয় বরং, চারজনই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।

সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে ফেসবুকে প্রচারিত এই ডিজিটাল ব্যানারের দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img