‘অমুসলিম হলে ধর্ষণ করা যাবে’ এমন কোনো মন্তব্য করেননি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

সম্প্রতি, “অন্য ধর্মের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারে এমন বিধান আল্লাহ রেখেছেন- Suad Saleh, professor Al Azhar University in Cairo, Egypt” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানেএখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে এবং এখানে

পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে এই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

২০১৬ সালের পোস্ট দেখুন এখানেএখানে। আর্কাইভ এখানে এবং এখানে
২০১৭ সালের পোস্ট এখানে। আর্কাইভ এখানে

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন এনটিভিJagonews24, ডেইলি জনতার নিউজ। আর্কাইভ এনটিভিJagonews24ডেইলি জনতার নিউজ

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন India.comZeenews
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন India.com, Zeenews

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাউদ সালেহ এ ধরণের কোনো মন্তব্য করেননি বরং তার নাম ব্যবহার করে প্রচারিত এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে, Asian Defence নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে Al-Azhar Professor Suad Saleh: In a Legitimate War, One Can Capture Slavegirls and Have Sex with Them শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ওয়েবসাইটটিতে প্রাপ্ত তথ্যের কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Middle East Media Research Institute এর টেলিভিশন MEMRI TV এর ওয়েবসাইট থেকে ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত Al-Azhar Professor Suad Saleh: In a Legitimate War, Muslims Can Capture Slavegirls and Have Sex with Them (Archival) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে আলোচিত ছবির ভিডিওটিও খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবির নারীর নাম সুয়াদ সালেহ। তিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক। Hayat tv র Fatwa নামের অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,

“‘Those whom you own’ (slavery) existed before Islam. It existed among all nations and countries, not just among pre-Islam Arabs. Anyone could trade in freeborn men and women. This is called the selling of freeborn people. It’s like the selling of human organs and trafficking in freeborn humans today. But when Islam emerged, it put (slavery) into order, by limiting it to legitimate wars between Muslims and their enemies. If we fought Israel, which is plundering land, and is an aggressor against people and their faith… Obviously, it is impossible that we will fight Israel, even though Surat Al-Isra in the Quran foretells this, and nothing is beyond the power of Allah… The female prisoners of war are ‘those whom you own.’ In order to humiliate them, they become the property of the army commander, or of a Muslim, and he can have sex with them just like he has sex with his wives.

“Some opportunists and extremists, who only harm Islam, say: ‘I will bring a woman from East Asia, as (a slavegirl) under the status of “those whom you own,” and with the consent of my wife, I will allocate this woman a room in the house, and will have sex with her as a slavegirl.’ This is nonsense. This is not prescribed by Islam at all. Islam says that a woman is either a wife or a slavegirl. Legitimately-owned slaves come from among prisoners from a war, which is waged against the Muslims, a war to plunder land, a war against our faith, and so on. What some people are doing now is an aggression against Allah and against Allah’s legal texts in the Quran, and we must not be influenced by this at all.”

“মানুষ ক্রয়-বিক্রয় এবং দাস হিসেবে রাখার প্রথা শুধু মাত্র আরবদের মধ্যে নয়, প্রাক-ইসলাম থেকেই বিভিন্ন জাতি এবং দেশের মধ্যে প্রথাটি চালু ছিলো। যে কেউ স্বাধীন পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে ব্যবসা করতে পারে। অনেকটা মানুষের অঙ্গ বিক্রি এবং মানুষ পাচারের মতো। কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের মাধ্যমে এই দাস প্রথা একটি কাঠামো পায়। নির্বিচারে সকলকে দাস হিসেবে গ্রহণ না করে শুধুমাত্র বৈধ-যু্দ্ধ বন্দীদের দাস হিসেবে রাখা হতো। যদি আমরা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করি, যারা ভূমি লুণ্ঠন করছে এবং মানুষ এবং তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আগ্রাসী… অবশ্যই, ইসরায়েলের সাথে আমরা যুদ্ধ  করব এটা অসম্ভব। যদিও কুরআনের সূরা আল-ইসরা এ এই সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং কোন কিছুই আল্লাহ ক্ষমতার উর্ধ্বে নয়। নারী যুদ্ধবন্দী যাদের মালিকানা দাবি করা হয়’ তাদের সেনাপতি বা মুসলমানের সম্পত্তি হিসেবে ভাবা হয়, এবং অপমান করার জন্য তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে যেমন্টা  তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে করে থাকে।

“কিছু সুবিধাবাদী এবং চরমপন্থী, যারা শুধুমাত্র ইসলামের ক্ষতি করার জন্য বলে: ‘আমি পূর্ব এশিয়া থেকে একজন মহিলাকে (একজন ক্রীতদাস) “আপন মালিকানা” হিসাবে আনব এবং আমার স্ত্রীর সম্মতিতে ঘরে স্থান দিব। দাসী হিসাবে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করব।’ এটা একদম বাজে কথা। ইসলাম কখনো এধরণের কথা বলেনা। ইসলাম বলে যে, একজন নারী হয় একজন স্ত্রী বা দাসী। বৈধ মালিকানাধীন ক্রীতদাসরা, যারা বৈধ যুদ্ধ বন্দী- জমি লুণ্ঠনের যুদ্ধ, জমি লুণ্ঠনের যুদ্ধ, বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইত্যাদি। কিছু লোক এখন যা করছে তা আল্লাহর বিরুদ্ধে, কুরআনও আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাচ্ছে, এবং আমাদের কোন ভাবেই এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।” (অনুবাদ)

অর্থাৎ, ভিডিওটি থেকে জানা যায়,অধ্যাপক সুয়াদ সালেহ  বৈধ যুদ্ধে নারী বন্দীদের উপর আধিপত্য বা মালিকানার কথা বলেছেন কিন্তু “অন্য ধর্মের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারে এমন বিধান আল্লাহ রেখেছে্ন” এরকম কোন মন্তব্য ভিডিওটি থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নি এবং তিনি এমন কোনোও বিধানের কথাও বলেননি।

মূলত, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক সুয়াদ সালেহ Hayat tv এর Fatwa নামের অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে দাস প্রথা এবং তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রাক-ইসলামের পূর্বে দাস প্রথা বিদ্যমান ছিলো। এবং নারী দাসের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন সেই সময়ে সাধারণ ব্যাপার হিসেবে বিবেচিত হতো। ইসলাম-ই প্রথম নির্বিচারে যেকোন মানুষকে দাস বানানো থেকে শুধুমাত্র বৈধ যুদ্ধবন্দীদের দাস হিসেবে রাখার প্রথা চালু করে। সুয়াদ সালেহ তাঁর বক্তব্যে বৈধ যুদ্ধেরও ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে, ভূমি দখলদার, অত্যাচারী এবং অবিশ্বাসীদের কথা বলেন। সুয়াদ সালেহ-র এই বক্তব্যকেই বিকৃতভাবে “অন্য ধর্মের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারে এমন বিধান আল্লাহ রেখেছে্ন” শিরোনামে তাঁর দেওয়া বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে বলেন নি।

সুতরাং, অন্য ধর্মের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারে এমন বিধান আল্লাহ রেখেছেন শিরোনামে সুয়াদ সালেহ-র বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img