প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি

সম্প্রতি, “সংসদে বসেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক শিরোনাম ও “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে  একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগের

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নতুন নির্বাচনের অনুমোদন দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি। 

ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিগুলোর বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে In Search of Truth এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর “সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেবেন বলেছিলেন মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিওটি। ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের পরও আলাপ-আলোচনা চলতে থাকবে। যদি এই আলোচনার মাধ্যমে যদি আমরা কোনো সমঝোতায় আসতে পারি, প্রয়োজনে আমরা পুনরায় নির্বাচন দিব। 

পরবর্তীতে, BBC News বাংলা এর ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর “সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন: শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পর কোন সমঝোতা হলে, তখন সেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন হতে পারে।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি “কী করবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর ৫২.১০ মিনিট থেকে ৫৩.২০ মিনিট পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে হলে তিনি বলেন, মিডটার্ম ইলেকশনের (মধ্যবর্তী নির্বাচন) বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং আমি দায়িত্ব নিয়েই এটি বলছি।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিগুলোর সাথে উক্ত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই-৩

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Dr. Fayzul Huq এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২০ জানুয়ারি “নির্বাচনই হয়নি বলে ঘি ঢাললেন সিইসি! পদত্যাগ যে সময়ে! ড. ফয়জুল হক Dr. Fayzul Huq” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হককে  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্য নিয়ে  আলোচনা করতে দেখা যায়। 

কিন্তু, উক্ত ভিডিওর কোথাও আলোচিত দাবিগুলোর স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে কোনো সমঝোতায় পৌঁছালে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। তার সে পুরোনো বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পুনরায় নির্বাচনের অনুমোদন দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img