সম্প্রতি, “মারহাবা মারহাবা মারহাবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন! প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম শরীফ করতে হবে বাধ্যতামূলক” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম বাধ্যতামূলক শীর্ষক কোনো নির্দেশনা দেননি বরং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার তথা কবরে মিলাদ কিয়াম করা প্রসঙ্গে প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যের বরাতে উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে Islamic Front Bangladesh নামক একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ মিলাদ কিয়াম পালন করতেই হবে মসজিদে,মাজারে।–ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
৪ মিনিট ২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ৫৮ সেকেন্ডে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন,’আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। বঙ্গবন্ধুর আমি রাজনৈতিক শিষ্য। বঙ্গবন্ধুর সাথেই আমি রাজনীতি শুরু করেছি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনার পর এক বছর আমিও পলাতক ছিলাম। যখন আমি দেশে গেলাম ৭৬ সালে, মাজারের ধারে কেউ যেতে পারত না। ওই মাজার আর্মিদের দ্বারা আটকা ছিলো, ৩২ নম্বর বাড়ি আটকা ছিলো। কোনো আলেম ওলামা ওখানে গিয়ে জিয়ারত করত না।’
পরবর্তীতে শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যেহেতু আমি মাদ্রাসায় পড়া লোক, আমার কিছু ধর্মীয় জ্ঞান আছে। ওইখানে আমিই কিন্তু মিলাদ পড়ানো শুরু করছি এবং আলেমরা আসত না ভয় পেয়ে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর্যন্ত আমি কিন্তু মোনাজাত পড়িয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলেও ওইখানে যেদিন মোনাজাত করা হয়, প্রথম মোনাজাত কিন্তু আমি করেছিলাম। তখন কিন্তু কোনো হুজুররা সেখানে আসতেন না।’
এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে মিলাদ কিয়াম পালনের ব্যাপারে উক্ত ভিডিওটির পরবর্তী ২ মিনিট থেকে ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ যখনই কোনো অনুষ্ঠান মাজারে হবে, সাথে সাথে মসজিদে মিলাদ হবে এবং মিলাদটা পরিচালনার দায়িত্ব আমার।’
সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের এই অংশটুকুই পরবর্তীতে বিভ্রান্তিকরভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়। যদিও উনার বক্তব্যের কোথাও প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম পালনের কথা উল্লেখ নেই। তিনি মূলত প্রধানমন্ত্রীর বরাতে বঙ্গবন্ধুর মাজারে মিলাদ-কিয়াম পালনের কথা বলেছেন।
এছাড়া দাবিটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ “মিলাদ-কিয়াম বন্ধের বিষয়ে যা জানালেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মিলাদ-কিয়াম বন্ধ করা হয়েছে এমন একটি দাবির প্রেক্ষিতে সচিবালয়ে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিদের বিশেষ বৈঠক বসে। উক্ত বৈঠকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মিলাদ-কিয়াম বন্ধ করা হয়েছে বলে যে প্রচারণা চলছে, তা গুজব ও অপপ্রচার বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মূলত, ২০১৯ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহর নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি মিলাদ-কিয়ামকে বিদয়াত আখ্যায়িত করে বাইতুল মোকাররমে তা বন্ধ করেছেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে তার দেওয়া একটি বক্তব্যের বরাতে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম শরীফ বাধ্যতামূলক করেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার তথা কবরে মিলাদ কিয়াম করা প্রসঙ্গে শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি নির্দেশনাকে দেশের প্রত্যেক প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম করা বাধ্যতামূলক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ কিয়াম বাধ্যতামূলক করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।