গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যেই খাগড়াছড়ি সদরের পাশের উপজেলা গুইমারা বাজারে আগুন দেওয়া ও সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে, “খাগড়াছড়ি মডেল মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিলো। নাস্তিকদের কি থামানো যায় না?” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে একটি স্থাপনা পুড়তে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি খাগড়াছড়িতে কোনো মডেল মসজিদ পোড়ানোর দৃশ্য নয় এবং সম্প্রতি কোনো মডেল মজিদ পোড়ানোর ঘটনাও ঘটেনি। বরং, দিনাজপুরের জীবন মহল নামের একটি বিনোদন পার্কে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে মডেল মসজিদ পোড়ানোর দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে, এতে ‘UNB’ লেখা একটি জলছাপ দেখা যায়। এই সূত্র ধরে সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)-এর ফেসবুক পেজে গত ২৯ আগস্ট ‘জীবন মহল পার্কে তৌহিদী জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ‘জীবন মহল’ নামের একটি বিনোদন পার্কে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন সংবাদকর্মীসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয়েছে দুটি মাইক্রোবাস ও পাঁচ সংবাদকর্মীর মোটরসাইকেল। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর আগে গত ১৭ আগস্ট ওই পার্কে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। অভিযানে দুজন নারী, পাঁচজন পুরুষসহ মোট সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং পার্কের মালিক আনোয়ার হোসেন ওরফে জীবন চৌধুরীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
কালবেলার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় পার্কের ভেতরে থাকা একটি দরবার শরিফেও আগুন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে যুক্ত ওই দরবার শরিফের ছবির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ভিডিওটি খাগড়াছড়িতে মডেল মসজিদ পোড়ানোর নয়।
সুতরাং, দিনাজপুরের জীবন মহল বিনোদন পার্কে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে খাগড়াছড়িতে মডেল মসজিদ পোড়ানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- UNB – United News of Bangladesh – Facebook Post
- Prothom Alo – অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে দিনাজপুরে বিনোদন পার্কে হামলা-আগুন-লুটপাট
- Kalbela – বিনোদন পার্কে হামলা-ভাঙচুর, দরবার শরিফে আগুন