ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে পাকিস্তানে খাদ্যের জন্য মসজিদের লোহা ও ইট বিক্রির দৃশ্য দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি ‘পাকিস্তানের বুভুক্ষু মানুষ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলছে এবং নিজেদের খাদ্যের জন্য মসজিদের লোহা ও ইট বিক্রি করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে এভাবে তিনটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে খবর। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যে আল্লাহ আমাদের খাবার দিতে পারে না; সেই আল্লাহর মসজিদ রেখে লাভ কী !’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাকিস্তানিদের নিজেদের খাদ্যের জন্য মসজিদ ভেঙে সে মসজিদের লোহা ও ইট বিক্রির দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন একটি ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে এটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের করাচিতে তেহরিক-ই-লাব্বাইক নামে একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সদস্য কর্তৃক আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ ভাঙার ভিডিও। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘After Punjab, demolishing the minarets of Ahmadi places of worship started in Karachi (আর্কাইভ)’  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টুইটে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Twitter 

টুইটটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, পাঞ্জাবের পর করাচীতে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের উপসনালয় ভেঙে ফেলতে শুরু করে। করাচীর সদরে এক দল লোক আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের এই উপসনালয়ের মিনার ভেঙে ফেলে। এর দুই সপ্তাহ আগে মার্টিন কোয়ার্টারে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের আরেকটি উপসনালয় ভেঙে ফেলা হয়।

এই ভিডিওটির সঙ্গে খাদ্যের জন্য মসজিদ ভাঙার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner

এই টুইটারটির সূত্রে পরবর্তীতে পাকিস্তানি গণমাধ্যম Dawn এ গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘5 suspects arrested for allegedly vandalising Ahmadiyya place of worship in Karachi Saddar‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: DAWN 

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, করাচি পুলিশ  শহরের সদর এলাকায় আহমদিয়া উপাসনালয় ভাঙচুরের অভিযোগে পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রিডি পুলিশ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সাবাহাত আহমেদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআরও নথিভুক্ত করেছে।

Screenshot: DAWN 

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গেও খাদ্যের জন্য মসজিদ ভাঙার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা মসজিদের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner

এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘Pakistan: Extremists destroy minarets of Ahmadi Mosque Karachi, Tehreek-e-Labbaik members suspected‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Times of India

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-লাব্বাইকের সন্দেহজনক সদস্যদের হাতে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। করাচির সদরে আহমাদিয়া মসজিদের মিনার ভেঙে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এক মাসে দ্বিতীয়বার আহমাদিয়া মসজিদের মিনার ভেঙে ফেলা হল।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ১৯৭৫ সালের মে মাসের পরে এটাই দেশটিতে মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার। এর ফলে আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত ডলারের রিজার্ভ পাকিস্তানে নেই। এছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭০ মিলিয়ন ডলার কমে ২.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মূলত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির রিজার্ভের পরিমাণও কমে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের করাচীতে একদল লোক কর্তৃক একটি মসজিদ ভাঙার ভিডিওকে ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানিরা নিজেদের খাদ্যের জন্য মসজিদ ভেঙে সে মসজিদের লোহা ও ইট বিক্রি করছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি পাকিস্তানের করাচিতে তেহরিক-ই-লাব্বাইক নামে একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সদস্য কর্তৃক আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ ভাঙার ভিডিও। 

সুতরাং, ভিন্ন ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওকে পাকিস্তানিরা নিজেদের খাদ্যের জন্য মসজিদ ভেঙে সে মসজিদের লোহা ও ইট বিক্রি করছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img