গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ১ অক্টোবর ইসরায়েলে বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এরপর ৩ অক্টোবর ইসরায়েলের তেল আবিব শহরকে লক্ষ্য করে পাঁচটি ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুথি বিদ্রোহীরা। এর প্রেক্ষিতে ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় তেল আবিব শহরের বাত ইয়াম এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইওএফ) স্বীকার করেছে দাবিতে একটি তথ্য ও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি বাস স্টেশনে অবস্থানরত কয়েকটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের বাত ইয়াম এলাকা দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত ভিডিওটি ইসরায়েলের সাফেদ শহরের কেন্দ্রীয় বাস স্টেশনে ২০২২ সালে ঘটা এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার। যার সাথে ইসরায়েলে চালানো হুথি বাহিনীর সাম্প্রতিক ড্রোন হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এর তুরস্ক ভিত্তিক শাখার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১১ জুন İsrail’de 18 araç şüpheli şekilde alev aldı শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, এতে ব্যবহৃত ভিডিওটির শুরু কিছু অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনটি গুগল ট্র্যান্সলেটরের সহায়তায় অনুবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ভিডিওটি মূলত ইসরায়েলের সাফেদ নামক শহরের একটি বাস স্টেশনে কয়েকটি বাসে আগুন লাগার ঘটনার। ২০২২ সালের জুন মাসে ঘটা এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১৮ টি গাড়ি পুড়ে যায় বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসরায়েলভিত্তিক গণমাধ্যম The Times of Israel এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১১ জুন 18 buses torched in Safed; police probe possible link to protection racket payments শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে প্রচারিত আরেকটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইসরায়েলের সাফেদ শহরের কেন্দ্রীয় বাস স্টেশনে প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিনেই ভোররাতের দিকে ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৮ টি বাসের ১৬ টিই আফিফি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের এবং বাকি দুটি নাটিভ এক্সপ্রেস নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠানের।
এছাড়া, ইয়েমেনের চালানো ড্রোন হামলায় তেল আবিব শহরের বাত ইয়াম এলাকায় কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন-এর ওয়েবসাইটে গত ৩ অক্টোবর এবার তেল আবিবে ড্রোন হামলা চালালো ইয়েমেনের হুথিরা শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তেল আবিবের আকাশসীমায় ড্রোন শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তারা জানান, তেল আবিবের দক্ষিণে বাত ইয়াম এলাকায় গুলি করে তারা সেগুলো ধ্বংস করে দেন।
সুতরাং, ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের বাত ইয়াম এলাকার ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Cnn Turk Website: İsrail’de 18 araç şüpheli şekilde alev aldı
- The Times of Israel Website: 18 buses torched in Safed; police probe possible link to protection racket payments
- Bangla Tribune Website: এবার তেল আবিবে ড্রোন হামলা চালালো ইয়েমেনের হুথিরা
- Rumor Scanner’s Own Analysis