যশোরে বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে লালমনিরহাটের পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ৯ জুলাই রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে হত্যা করার ঘটনায় বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের দলের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন বিরোধী কর্মসূচি পালিত হতে দেখা যায়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, যশোরে বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যশোরে বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে যশোরের বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ফুটেজটির ১৬ সেকেন্ডে LALMONIRHAT শীর্ষক লেখা দেখতে পায়।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Lalmoni POST নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

ভিডিওটি বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার এই ভিডিওটি লালমনিরহাটের। ভিডিওটি ৮ নভেম্বর প্রচার করা হলেও ঘটনাটি সেবছরের ২৯ অক্টোবর ঘটে। বিবরণীতে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে শ্রমিক লীগের এক নেতা নিহত হলে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেয়। উক্ত ভিডিওটি ছাড়াও চ্যানেলটিতে সেদিনের ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপির কার্যালয়, কেন্দ্রীয় নেতার বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর, আগুন শীর্ষক শিরোনামে একই ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন সকালে বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে শ্রমিক ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম নামের এক নেতা মারা যান। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে একদল লোক জেলা বিএনপির কার্যালয়, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের বাসভবন ও শ্রমিক দলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সুতরাং, ২০২৩ সালে লালমনিরহাট বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে যশোরে বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img