চট্টগ্রামে জশনে জুলুসকে কেন্দ্র করে ঘটা সংঘর্ষের ভিডিও দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ঘিরে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে, “চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয় & চট্রগ্রাম এলাকা হাটহাজারি মাদ্রসা(ওহাবি) &হাটহাজারী এলাকাবাসি (সুন্নি) অনেকটা মিল পাচ্ছি” ও “এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে ভয়াবহ অবস্থা,,১৪৪ ধারা জারির পরে সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জ শুরু, চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে” সহ বিভিন্ন ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে হাটহাজারীতে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনার একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৮০’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিবৃতির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন বিশৃঙ্খলাকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতিকারীরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এ অভিযানের পর দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলেলুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এসময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে।

উক্ত ঘটনায় ঢাকা পোস্টকালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

সুতরাং, ২০২৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের হাজারী গলির পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি হাটহাজারীতে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img