ফরিদপুরে বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মিথ্যা

সম্প্রতি “বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষে উত্তপ্ত ফরিদপুর | বিএনপির রাজপথে খেলা দেখুন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে
পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ফরিদপুরের নয় বরং ভিডিওটি ঢাকায় গত ২৫ আগস্ট বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ৯ সংগঠনের অর্ধবেলা হরতালের।

ফরিদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।বিশ্লেষণে ভিডিওটির ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড সময়ে একজন হরতাল সমর্থককে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। 

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “জনসমর্থনের কথা বলতে গেলে বাম জোট এবং নয় সংগঠনের ডাকে যে হরতাল, সেই হরতালকে জনগণকে সমর্থন করেছে। আপনারা জানেন, এই চলতি মাসের ৫ আগস্ট মধ্য রাতে জ্বালানি তেলের মূল্য ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে।”

একই বক্তার ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের বক্তব্যে শোনা যায়, তিনি বলছেন, “শাহবাগ থানা পুলিশের যে কর্মকর্তারা রয়েছেন তারা সকাল থেকে আমাদের পিছু ধাওয়া করেছেন। বিনা উস্কানিতে ছাত্রদের উপর বারংবার লাঠি চার্জ করার উদ্ধত আচরণ করেছেন।” 

ভিডিওটির ৫ মিনিট ১৪ সেকেন্ড সময়ে তিনি বলেন, “বেলা ১২ টা পর্যন্ত আমাদের যে হরতালের কর্মসূচি, আমরা দেখেছি সারা দেশে পুলিশের বাধার মুখে আমাদের নয় সংগঠন এই হরতালের কর্মসূচি পালন করেছেন। যতদিন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য হ্রাস করা না হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না আনা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমরা লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাব।”

তিনি তার বক্তব্যের শেষ অংশে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নয় সংগঠন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন৷ 

তার এই বক্তব্যগুলো থেকে বুঝা যায়, ভিডিওটি   গত আগস্ট মাসে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নয় সংগঠন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের  ডাকা অর্ধবেলা হরতালের। যেটি ধারণ করা হয়েছিল রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকা থেকে। ভিডিওটিতে উপস্থিত পুলিশের পোশাক থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ধরনের পোশাক মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যবহার করে থাকে।

এছাড়া ভিডিওটির শুরুতেই ৫ সেকেন্ড সময়ে একজন হরতাল সমর্থককে বলতে শোনা যায়, “আমি ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি।” এ থেকেও বুঝা যায়,  ভিডিওটি ঢাকায় ধারণ করা। 

পাশাপাশি ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ড সময়ে হরতাল সমর্থকদের হাতে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির নাম সম্বলিত একটি ব্যানার খুঁজে পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ২৫ আগস্ট “রাজধানীতে বাম দলের আধাবেলা হরতাল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদনটির প্রথম অংশের সাথে ফরিদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগের  সংঘর্ষের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ১৫ থেকে ২৫ সেকেন্ড সময়ের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবিতে সারা দেশে গত ২৫ আগস্ট অর্ধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ৯ সংগঠন। ঢাকায় এই হরতাল চলাকালে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি ও হরতাল সমর্থকদের বক্তব্যের একাধিক ভিডিও যুক্ত করে ফরিদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া এসব ভিডিওয়ের সঙ্গে বিএনপি-আওয়ামী লীগ বা ফরিদপুরের কোনো যোগসূত্র রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, গত শনিবার, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘর্ষের তথ্য বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায় না।

সুতরাং, ফরিদপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img