সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের দাগ সম্বলিত একজন নারীর দুইটি ছবির একটি কোলাজ প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতা সারোয়ার তুষার তার লিভিং পার্টনার লাল বিপ্লবী বিথী সপ্তর্ষিকে মে*রে হাসপাতালে পাঠাইছে!’

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সাংবাদিক বিথী সপ্তর্ষির নয় বরং, ২০২১ সালে নিহত হওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার ছবি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘ফারিহা রহমান’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে ৬ টি ছবি সম্বলিত প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে পোস্টকারী লিখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলা নামের তার এক পরিচিত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রচারিত উক্ত ছবিগুলোর মধ্যে দুইটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি ইলমা চৌধুরী মেঘলার।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যু, শরীরে আঘাতের চিহ্ন” শীর্ষক শিরোনামে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীর নাম ইলমা চৌধুরী (মেঘলা)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে আটক করেছে পুলিশ।
…ইলমার ফুপাতো বোন রেহানা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, বছরখানেক আগে ইলমা নিজের পছন্দে ইফতেখার আবেদীনকে বিয়ে করেন। রেহানা সুলতানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫–১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন ইলমা। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বিয়ের পর ইলমাকে কানাডায় নেওয়া, ছোট বোনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইফতেখার। তাই খুব অল্প দিনের পরিচয়েই তাঁকে বিয়ে করেন ইলমা। কিন্তু বিয়ের পর ইলমাকে আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগই করতে দেওয়া হতো না। এমনকি ইফতেখার যে ঢাকা এসেছেন, সে খবরও জানতেন না ইলমার স্বজনেরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁরা খবর পান। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ইলমাকে যখন আনা হয়েছে, তাঁর আগেই তিনি মারা গেছেন। ইলমার স্বজনেরা আরও জানান, ইফতেখার সন্দেহপ্রবণ ছিলেন। এ বিষয়ে ইফতেখারের পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।”
এছাড়াও, এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্ট ও মূলধারার গণমাধ্যম বিবিসি নিউজ বাংলার ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ঘটনাটি ২০২১ সালের এবং প্রচারিত ছবিটি ইলমা চৌধুরী মেঘলা নামে এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর।
পরবর্তীতে, আলোচিত সাংবাদিক বিথী সপ্তর্ষির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি পোস্ট গত ০৭ এপ্রিলে বিথী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে লিখেছেন, “প্রথম কথা, আমি দেশে নাই।
দ্বিতীয় কথা, এই ছবি আমার না এবং আপনাদের এই সব পোস্টের কারণে রিয়েল ভিক্টিমের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে।
হুদাই এই ধরনের নোংরা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়েন না।”
সুতরাং, ২০২১ সালে নিহত হওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার ছবিকে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতা সারোয়ার তুষারের নির্যাতনে আহত বিথী সপ্তর্ষির ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Fariha Rahman – Facebook Post
- Prothom Alo – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যু, শরীরে আঘাতের চিহ্ন
- Dhaka Post – ঢাবি ছাত্রী ‘হত্যায়’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি মহিলা পরিষদের
- BBC News Bangla – এলমা চৌধুরী মেঘলা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্রীর মৃতদেহে ‘প্রচুর’ আঘাতের চিহ্ন, ধরতে দেয়া হত না ফোন