সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। এরই প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি এক বিদেশি নারী সংবাদ উপস্থাপিকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাতের ভিডিও দেখে কেঁদেছেন শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফুটেজ দেখে উক্ত নারী উপস্থাপিকার কান্নার ভিডিও নয় বরং ২০১৯ সালে সিরিয়ার একটি সংবাদ পাঠের সময় পাঠিকার কান্নার দৃশ্যের ভিডিও সম্পাদনা করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করার মাধ্যমে সিরিয়া ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের আরবি ভাষার গণমাধ্যম Orient News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই “ الصورة التي أبكت مذيعة الأورينت أجهشت بالبكاء وتم قطع البرنامج على الهواء” (অনুবাদঃ The picture that made the Orient anchor cry sobbed, and the program was cut off from the air) শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, Orient News এর অফিশিয়াল এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে একই দিনে ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
ভিডিওটিতে আরবি ভাষায় সিরিয়া নিয়ে করা একটি রিপোর্ট পড়তে গিয়ে সংবাদ পাঠিকাকে আবেগতাড়িত হয়ে কান্না করতে দেখা যায়। ওরিয়েন্ট টিভিতে সংবাদ পাঠিকার সিরিয়া নিয়ে পাঁচ বছরের পুরোনো এই রিপোর্ট পড়তে গিয়ে কেঁদে ফেলার এই ভিডিওতেই চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘাতের একটি ভিডিও সম্পাদনা করে বসিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাতের একটি ভিডিও দেখে একজন বিদেশি সাংবাদিক কাঁদছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি ওরিয়েন্ট টিভিতে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই প্রচার করা হয় এবং সংবাদটি সিরিয়ার সংঘাত নিয়ে ছিল। সম্প্রতি উক্ত সংবাদের ফুটেজটি সম্পাদনা করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাতের একটি ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।
সুতরাং, কোটা আন্দোলনে সংঘাতের ভিডিও দেখে একজন বিদেশি সাংবাদিক কেঁদেছেন দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার সংবাদের একটি ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Orient TV: Youtube Video
- Orient News: X (Twitter) Post
- Rumor Scanner’s own analysis