গত ১৪ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হঠাৎ লাইভে এসে ক্ষমা চাইলেন খালেদা জিয়া, দেশবাসীর প্রতি এ কি বার্তা দিলেন’ শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটি’র লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে লাইভে এসে কারো কাছে ক্ষমা চাননি বরং খালেদা জিয়ার পুরোনো সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও’র সাথে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে খালেদা জিয়ার পুরোনো অপর একটি ছবি যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তাতে ‘লাইভ’ আইকন বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারো কাছে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি। ভিডিওটিতে খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Voice of America’ এর বাংলা বিভাগের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১১ সালের ২৮ মে ‘Khaleda Zia’s Exclusive Interview with VOA’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে উল্লেখিত বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসোন খালেদা জিয়ার একান্ত সাক্ষাতকারের ভিডিও এটি। সেখানে তিনি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র হুবহু মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি প্রায় ১২ বছর পূর্বের এবং এটি খালেদা জিয়ার লাইভে এসে ক্ষমা চাওয়ার কোনো ভিডিও নয়।
আলোচিত ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে ব্যবহৃত খালেদা জিয়ার ছবিটিও পুরোনো
আলোচিত ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। উক্ত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠ’র অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ০৫ মে ‘খালেদা জিয়ার করোনা জয়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি’র অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লাইভে এসে কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জানা যায়, তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজের গুলশানের বাসভবনে ফিরেছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড ১১ জানুয়ারি থেকে থেকে তাকে গুলশানের বাসায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত বছরের ৯ আগস্ট হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
মূলত, ২০১১ সালে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা’র বাংলা বিভাগের কাছে একান্ত সাক্ষাতকারে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উক্ত সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও সেসময় সংবাদমাধ্যমটি’র বাংলা বিভাগের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি সেখান থেকে উক্ত ভিডিওটি সংগ্রহ করে গত ১৪ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হঠাৎ লাইভে এসে ক্ষমা চাইলেন খালেদা জিয়া, দেশবাসীর প্রতি এ কি বার্তা দিলেন’ শীর্ষক দাবি সম্বলিত শিরোনাম ও থাম্বনেইলের সাথে খালেদা জিয়ার পুরোনো অপর একটি ছবি যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তাতে ‘লাইভ’ আইকন বসিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লাইভে এসে কারো কাছে ক্ষমা চাননি।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ ১১টি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রবিবার শুনানি মুলতবি করে নতুন তারিখ ধার্য করেছেন বলে জানান অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি স্থগিত করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ইন্টারনেটে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লাইভে এসে ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- VOA বাংলা YouTube: Khaleda Zia’s Exclusive Interview with VOA
- Kalerkantho: খালেদা জিয়ার করোনা জয়
- The Daily Star: ৫ মাস পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
- Manab Zamin: খালেদা জিয়ার ১১ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি
- Rumor Scanner’s Own Analysis