কোটা আন্দোলনে কুমিল্লায় আবদুল্লাহ মাহবুব নামে কেউ নিহত হননি, ফিরে আসার দাবিটি ভুয়া 

সম্প্রতি জুলাইয়ের কোটা আন্দোলনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আবদুল্লাহ মাহবুব নামে নিহত হওয়া এক ব্যক্তি বাড়ি ফিরে এসেছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উক্ত দাবিতে প্রচার হওয়া ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ)।

একই বিষয় Shamim Ashraf নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কথিত একটি পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করেও প্রচার হতে দেখা যায়।

ছবি যুক্ত করে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা আন্দোলনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আব্দুল্লাহ মাহবুব নামে কেউ নিহত হননি। তাই এমন কোনো ব্যক্তির বাড়িতে ফিরে আসার দাবিটিও অমূলক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমকর্মীও বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া, আলোচিত দাবি প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি অন্তত ০৪ ডিসেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।। প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে  পোস্টগুলোতে দুইজন ব্যক্তির ছবি যুক্ত একটি পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার হতে দেখা যায়। স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, পোস্টটি ‘Shamim Ashraf’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া৷ 

পরবর্তীতে উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে Shamim Ashraf নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে উক্ত অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আরও অনুসন্ধানে উক্ত অ্যাকাউন্টে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত পোস্টটিতে থাকা ছয়টি ছবির মধ্যকার একটি ছবির সাথে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা ছবিটির মিল রয়েছে। তবে, উক্ত পোস্টের ক্যাপশনের সাথে আলোচিত দাবির স্ক্রিনশটের ক্যাপশনের মিল নেই।

Comparison By Rumor Scanner 

এছাড়া, অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়,

শামীম আশরাফ কুমিল্লার বাসিন্দা নয় বরং তিনি নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা এবং গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রচারিত পোস্টটিতে যে ব্যক্তিতে ট্যাগ করা হয়েছে তিনিও কুমিল্লার নয় বরং নরসিংদীর বাসিন্দা। 

আলোচিত পোস্টগুলোতে যুক্ত স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, পোস্টটি ‘Nasir Ahmmed’ সহ দুইজনকে ট্যাগ করে পোস্ট করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, শামীম আশরাফের অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৩ ডিসেম্বর ‘Nasir Ahmmed’ সহ দুইজনকে ট্যাগ করে একটি পোস্ট করা হয়েছে। তবে, উক্ত পোস্টের ভিডিও ও ক্যাপশনের সাথেও আলোচিত দাবির স্ক্রিনশটের মিল পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

অর্থাৎ, উক্ত পোস্টটি এডিট করে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে। 

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আব্দুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন কি না সেবিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে  জনপ্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

দাউদকান্দির সুন্দলপুর ইউনিয়নের সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, এই নামের কেউ নিহত হননি। 

সুন্দলপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহফুজ জানান, ২ নং ওয়ার্ডে কেউ মারা যাননি৷

৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মতিউর রহমান জানান, এই ইউনিয়নে এই নামের কেউ নিহত হননি। 

কুমিল্লা জেলার এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজ নান্টু বলেন, আমার জানামতে দাউদকান্দির এই নামের কেউ নিহত হহনি। 

এটিএন বাংলা নিউজের কুমিল্লা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের জানামতে দাউদকান্দির বাসিন্দা দুইজন অন্য জায়গায় নিহত হয়েছিলেন। একজনের নাম জাহিদ হাসান ফাহিম ও আরেকজনের নাম রিফাত। তবে, আবদুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ নিহত হয়েছিলেন এই তথ্য আমাদের জানা নাই। 

এছাড়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিবকে হোসাইন বলেন, দাউদকান্দিতে আবদুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ শহিদ হননি। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাউদকান্দি উপজেলার সংগঠক সাইফুল ইসলাম বলেন, জাহিদ হাসান, রিফাত এবং বাবু নামের তিনজন শহিদ হয়েছেন। আবদুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ শহিদ হননি৷

পাশাপাশি, দাউদকান্দিতে নিহত ব্যক্তিদের একটি তালিকা রিউমর স্ক্যানারের হাতে এসেছে। সেখানে জাহিদ হাসান, রিফাত এবং মোঃ বাবু নামের তিনজন নিহতের তথ্য থাকলেও আবদুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ নিহতের তথ্য নেই৷ এমনকি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতের তালিকাও আবদুল্লাহ মাহবুব নামের কেউ নিহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কুমিল্লার দাউদকান্দির নিহত আবদুল্লাহ মাহবুব নামের একজন বাড়িতে ফিরেছেন’- শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img