বৃহস্পতিবার, মে 22, 2025

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল শীর্ষক মন্তব্য বা ঘোষণা দেননি সেনাপ্রধান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে গত ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে সম্প্রতি, ‘আ.লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল – সেনা প্রধান’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল শীর্ষক কোনো ঘোষণা বা মন্তব্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করেননি। বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টগুলোতে ‘বিস্তারিত কমেন্টে’ উল্লিখিত সূত্র হিসেবে একটি লিংক দেওয়া হয়েছে। লিংকটিতে ক্লিক করলে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ইন্টারফেস দেখা যায়, যেখানে আলোচিত দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত কথিত একটি প্রতিবেদন প্রদর্শিত হয়।

তবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই লিংকটি রিডাইরেক্ট হয়ে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞাপন বা পাতায় নিয়ে যায়। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে কথিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা ‘news6angla’ নামের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়।

কথিত প্রতিবেদনটিতে ‘আ. লীঘ নিষিন্ধ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদনের প্রিন্ট সংস্করণের স্ক্রিনশট যুক্ত রয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা হয় ১১ মে।

কথিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালতের যৌথ সিদ্ধান্ত। আজ দুপুরে (প্রতিবেদনের তারিখ অনুযায়ী ১১ মে) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবেদনটিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল শীর্ষক কোনো ঘোষণা বা মন্তব্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করেছেন এমন কোনো তথ্য সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিবেদনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘১০ মে উপদেষ্টা পরিষদে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধন অনুমোদিত হয়েছে। এতে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনও রাজনৈতিক দল তার অঙ্গ সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে গত ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

সুতরাং, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল শীর্ষক কোনো ঘোষণা বা মন্তব্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করেছেন দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img