সম্প্রতি ‘সাংবাদিকতায় জন্য নতুন আইন পাশ! সংবিধানের ৩৯ধারা গণমাধ্যম কর্মীরা সর্বাধিক স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে পারবে!কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবেনা! কেউ যদি প্রকাশিত সংবাদে সংক্ষুব্ধ হয়,তাহলে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করতে হবে!আদালতের সাংবাদিকদের বিচার করার ক্ষমতা রাখেন না বলে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এর নির্দেশনায় রায় দিয়েছে!’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাংবাদিকতায় নতুন আইন পাশের দাবিতে তথ্যটি কোনো আইন নয় বরং ২০২২ সালে দেওয়া হাইকোর্টের একটি রায়কে নতুন আইন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ‘সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশে বাধ্য নন: হাইকোর্ট‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্র বনাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় একটি রায় দেন।
এ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেওয়া আছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, এটা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সার্বিক দিক বিবেচনায় মতামত হলো, সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি এবং দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন।

রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ আছে— এ ধরনের সব সংবাদ সাংবিধানিকভাবে ও আইনগতভাবে সাংবাদিকরা তুলে ধরতে পারেন। সাংবাদিকদের সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে তাতে সাংবাদিকরা তাদের নিউজের তথ্যের সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন।

একইদিনে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Post এ ‘সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়, হাইকোর্টের রায়‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও আদালতের উক্ত রায় সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।

পাশাপাশি আরও জানা যায়, সাংবাদিকের কোনো সংবাদের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
এই প্রতিবেদনটির সূত্রে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিকের এই রায় নিয়েও একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত বক্তব্যটির সঙ্গে প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

হাইকোর্টের উল্লেখিত রায়টি নিয়ে মূলধারার অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ‘সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশে কারও কাছে বাধ্য নয়: হাইকোর্ট (ঢাকাটাইমস২৪)’, ‘কোনো সাংবাদিক সোর্স প্রকাশে বাধ্য নয়: হাইকোর্টের রায় (সময়টিভি)’, সাংবাদিলকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়: হাইকোর্ট (ঢাকা মেইল)।
অপরদিকে সাংবাদিকতার জন্য নতুন আইন পাশের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির সঙ্গে হাইকোর্টের এই রায়ের কিছু অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, নতুন আইন পাশের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটিতে সংবিধানের ৩৯ ধারা ও সাংবাদিকের প্রকাশিত সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাকে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করার বিষয়টির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, প্রেস কাউন্সিল আধা বিচারিক একটি প্রতিষ্ঠান। এর দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে আছে সাংবাদিকতার নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা লঙ্ঘিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল অভিযুক্ত সংবাদপত্রকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি পুরো রায় ছাপতে বাধ্য করে থাকে।
তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে নতুন আইন পাশের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির শেষ অংশ অর্থাৎ ‘আদালত সাংবাদিকদের বিচার করার ক্ষমতা রাখেন না’ অংশটির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনুসন্ধানে সাংবাদিকতার জন্য নতুন কোনো আইন পাশের ব্যাপারেও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২১ সালের ২ মার্চ জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন নিয়ে জারি করা রুলের পূর্নাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের ৩৯ ধারা উল্লেখ করে বলেন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ আছে— এ ধরনের সব সংবাদ সাংবিধানিকভাবে ও আইনগতভাবে সাংবাদিকরা তুলে ধরতে পারেন। এছাড়া রায়ে সাংবাদিকের কোনো সংবাদের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। উক্ত রায়টিকে নিয়েই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকতার জন্য নতুন আইন পাশের দাবিতে অতিরঞ্জিত তথ্য যুক্ত করে ‘আদালত সাংবাদিকদের বিচার করার ক্ষমতা রাখেন না’ প্রচার করা হচ্ছে৷ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এমন কোনো আইনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সাংবাদিকতার জন্য নতুন আইন পাশের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Desh Rupantor: সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশে বাধ্য নন: হাইকোর্ট
- Dhaka Post: সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়, হাইকোর্টের রায়
- Dhaka Times24: সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশে কারও কাছে বাধ্য নয়: হাইকোর্ট
- Somoy TV: কোনো সাংবাদিক সোর্স প্রকাশে বাধ্য নয়: হাইকোর্টের রায়
- Dhaka Mail: সাংবাদিলকরা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয়: হাইকোর্ট
- Daily Prothom Alo: সাংবাদিকতাকে ভয় দেখাচ্ছে প্রেস কাউন্সিল