রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন

সম্প্রতি “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু ভারতের আর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টাই নন, এশিয়ার আরও একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত তিনি লিখেছেন। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও রবীন্দ্রনাথের লেখা!” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত এরকম সংবাদ দেখুন Bangla News24.Com
সংবাদের আর্কাইভ ভার্সন দেখুন Bangla News24.Com

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে

এছাড়াও ২০১৬ সালে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 
এছাড়াও ২০১৯ সালে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 
এছাড়াও ২০২১ সালে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন বরং শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা আনন্দ সামারাকুন।

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম “হিন্দুস্তান টাইমসের” ২০১০ সালের ১২ মে প্রকাশিত “Tagore’s influence on Lankan culture” শীর্ষক শিরোনামের একটি সংবাদ পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদে বলা হয় –

“Rabindranath Tagore wrote the national anthems of two countries, India and Bangladesh. But he deeply influenced the words and music of a third, the Lankan national anthem, ‘Sri Lanka Matha’.”

অর্থাৎ যার ভাবার্থ করলে হয়,

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুইটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন। ভারত এবং বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত ‘Sri Lanka Matha’য় শব্দ ও সুরের মাধ্যমে বেশ প্রভাব রেখেছেন।

এছাড়াও, সংবাদে আরো বলা হয়,

“The anthem was written and composed by Ananda Samarakoon, most probably in 1939-40, while he was Tagore’s disciple at Visva-Bharati University.”

অর্থাৎ, গানটির কথা ও সুর করেন আনন্দ সামারাকুন। গানটি লেখা হয় ১৯৩৯-‘৪০ সালের মধ্যে যখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের শিষ্য ছিলেন সামারাকুন।

সুতরাং, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য হন আনন্দ সামারাকুন। সেসময় সামারাকুনের লেখায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব লক্ষনীয় হয়। যে কারণে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব আছে বলা হয়।

এছাড়াও, Sunday Times এ ১১ জুন ২০০০ সালে প্রকাশিত “The Melody Maker: Ananda Samarakoon” শীর্ষক শিরোনামের একটি সংকলিত প্রবন্ধ পাওয়া যায়। উক্ত প্রবন্ধ সূচিপত্রের চতুর্থ প্যারায় আনন্দ সামারাকুন সম্পর্কে জানা যায়,

The most notable contribution of his was the national anthem,

Namo Namo Matha” a song conveying patriotism and the love for Lanka. He composed songs for Sinhala films namely “Sujatha, Sedasulan, Duppathage Duka, Dosthara and Surasena.

অর্থাৎ, সামারাকুনের সবচেয়ে সবচেয়ে উল্লেখিত কাজের মধ্যে একটি হলো জাতীয় সঙ্গীত। “নম নম মাতা” গানটি দেশপ্রেম ও শ্রীলঙ্কার প্রতি ভালোবাসার সাক্ষ্য দেয়।


উল্লেখ্য, Daily Mirror এ ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি Singing National Anthem in Sinhala only Tug of war continues over ‘Matha’ and ‘Thaaye’ শীর্ষক শিরোনামের একটি সংবাদ পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ থেকে শ্রীলঙ্কার গানের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। শ্রীলঙ্কার প্রবীন গীতিকার Prof. Sunil Ariyaratne জানান,

“When Sri Lanka became an independent state in 1948 there was a competition to select a national anthem,” recalled veteran lyricist Prof. Sunil Ariyaratne . “Hence the first national anthem was titled ‘Sri Lanka Matha Pala Yasa Mahima’ which was selected by the Lanka Gandharva Sabha. However by then Ananda Samarakoon’s ‘Namo Namo Matha’ was sung in school choirs and gained much popularity. But it wasn’t even shortlisted for the competition. Therefore, the Cabinet approved it to be the official national anthem on November 22, 1951.

অর্থাৎ, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর একটি জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণে জন্য দেশব্যাপী প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। তৎকালীন শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ নিজের স্বলিখিত গান পাঠাতে থাকে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণের জন্য। প্রথম জাতীয় সঙ্গীত ছিলো ‘Sri Lanka Matha Pala Yasa Mahima’ যেটি লিখেছিলেন Lanka Gandharva Sabha. পরবর্তীতে আনন্দ সামারাকুনের Namo Namo Matha গানটি বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং শ্রীলঙ্কার সংসদে এই গানটিই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহিত হয়।

মূলত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের লেখক ও প্রযোজক আনন্দ সামারাকুন। আনন্দ সামারাকুন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথের নৈকট্য লাভ করেন। এমনকি সামারাকুন নিজেও তার লেখনীতে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে তার লেখায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব লক্ষনীয় হয়। পরবর্তিতে এই কথাটিই বিকৃত হয়ে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দাবিতে প্রচারিত হতে থাকে।

সুতরাং, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img