২০২২ সালে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি নিহতের ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একজন ব্যক্তির ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ছবিটি নরেন্দ্রনাথ মুন্ডু নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর, যিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উগ্রবাদী মুসলিমদের সশস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা নিহত হওয়ার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি ২০২২ সালের ঘটনা। তাছাড়া, সাম্প্রদায়িক কারণে নয় বরং জমি দখল সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় তার ওপর হামলা হয়। হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২২ সালের ২০ আগস্ট নরেন্দ্রনাথ মুন্ডার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল কে. মধু (Engr Mrinal K Madhu) নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ২১ আগস্টে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটিতে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তিও পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

মৃণাল কর্তৃক প্রচারিত পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সাতক্ষীরার শ্যামনগরে #আদিবাসী_মুণ্ডা_সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করতে হামলাকারীদের নৃশংস হামলায় আহত হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আহব্বান জানাচ্ছি।”

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২১ আগস্টে “সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা গেছেন, গ্রেপ্তার ২” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “(২০২২ সালের) ১৯ আগস্ট সকালে শ্যামনগরের ধুমঘাটে মুন্ডা সম্প্রদায়ের জমি দখলে নিতে হামলা চালায় শ্রীফলাকাটি গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ও ইবাদুল ইসলামের নেতৃত্বে বংশীপুর এলাকার দুই শতাধিক মানুষ। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় মুন্ডাদের বাড়িতে। […] শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ জানান, “ধুমঘাট গ্রামে মুন্ডা সম্প্রদায়ের আট বিঘা জমির জবর দখল নিতে শুক্রবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে শ্রীফলকাটি গ্রামের এবাদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।” তিনি আরও বলেন, “দখল নিতে বাধা দেয়ায় মুন্ডাদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এতে বিলাসী মুন্ডা, রিনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও নরেন্দ্র মুন্ডা মারাত্মক আহত হন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নরেন্দ্র মুন্ডা শনিবার (২০২২ সালের ২০ আগস্ট) বিকালে সাতক্ষীরা মেডিকেলে মারা গেছেন।”

একই বিষয়ে সেসময় মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকেও আলোচিত ঘটনার বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নরেন্দ্র মুন্ডাকে হত্যা ও মুন্ডা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিচার দাবিতে ২০২২ সালের ০১ সেপ্টেম্বর শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, শুধু সম্পত্তির লোভে তাদের (মুন্ডাদের) ওপর একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে। হামলাকারীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

অর্থাৎ, হামলাটি সাম্প্রদায়িক কারণে নয় বরং সম্পত্তির লোভে করা হয়েছিল। তাছাড়া, ঘটনাটি ঘটেছে ২০২২ সালে।

সুতরাং, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হওয়া হামলার কারণে ২০২২ সালের ২০ আগস্টে নিহত হওয়া নরেন্দ্রনাথ মুন্ডার মৃত্যুর ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত হওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img