সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও জেএসএস (সন্তু) দলের মধ্যে হওয়া গোলাগুলির দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে। দুই দলের শতাধিক সশস্ত্র সদস্য এতে অংশ নেয়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও জেএসএস (সন্তু) দলের মধ্যে গোলাগুলির দৃশ্যের নয় বরং, মিয়ানমারের মিয়াউং শহরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে এক বা একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হওয়া সংঘর্ষের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘မောင်း’ নামক মিয়ানমার ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ৯ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “মিয়ানমারের মিয়াউং শহরের কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশনে সন্ত্রাসী জান্তা সেনারা হামলার শিকার হয়েছে। এতে একজন সেনা অধিনায়ক এবং তিনজন সৈনিক নিহত হয়েছে এবং তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে (ভিডিও/অডিও সংযুক্ত)। তারিখ: ৯ মে, ২০২৫ | সাগাইং অঞ্চল, মিয়াউং শহরের অধীনে, সাধারণ জনগণের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল জান্তা বাহিনীর ছয়জন সৈনিক। তাদের লক্ষ্য করে সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গুলি চালালে একজন সেনা অধিনায়ক এবং তিনজন সৈনিক নিহত হয় এবং তিনটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে বলে সিডিএসওএম (ဗိုလ်စင်္ကြာ) বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

৫ মে, মিয়াউং শহরের কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশন থেকে পাঠানো ছয়জন জান্তা সৈনিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছিল। সেই সময় প্রতিরোধ বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালালে একজন সেনা অধিনায়কসহ তিনজন নিহত হয় এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হয়। এই সংঘর্ষে প্রতিরোধ বাহিনীর এক সদস্য হাত ও বাহুতে গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থল থেকে এমএ-৩ টাইপের তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়।

এই হামলা পরিচালনা করেছে সিডিএসওএম (ဗိုလ်စင်္ကြာ) বাহিনী, এমআরএফ সাফো বাহিনী, সাগাইং জেলার প্রথম ব্যাটালিয়ন, স্থানীয় পিডিএফ (প্রতিরোধ বাহিনী) এবং জামানি গেরিলা ইউনিটের সম্মিলিত বাহিনী। ভিডিও: হেইন মিন টুন” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

এছাড়াও, ডেমোক্রেটিক ভয়েস অফ বার্মা (ডিভিবি) নামের মিয়ানমার ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে গত ১০ মে তারিখে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ছবির সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত স্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “মিয়াউংয়ে জান্তা সেনাদের উপর হামলা, ডেপুটি কমান্ডারসহ ৪ জন নিহত, ৩টি বন্দুক জব্দ | সাগাইং অঞ্চলের মিয়াউং শহরে ৫ মে তারিখে জান্তা সেনাদের উপর আচমকা হামলা চালানো হয়। এতে একজন ডেপুটি কমান্ডারসহ মোট ৪ জন সেনা নিহত হয় এবং কয়েকটি অস্ত্রও জব্দ করা হয় বলে ৯ মে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামলায় অংশ নেওয়া Myaung Rangers Force (M.R.F)…” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘Myaung Rangers Force -MRF’ নামের একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়৷ উক্ত পেজটিতে গত ৯ মে তারিখে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়৷ উক্ত ভিডিওটির নানা ফ্রেমে প্রদর্শিত স্থানের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত স্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সংঘর্ষ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ৫ মে ২০২৫ তারিখে মিয়াউং শহরের টোল গেটে টোল আদায়ে নিয়োজিত জান্তা বাহিনীর একটি গেটকে Myaung Rangers Force (M.R.F), সাগাইং জেলার ব্যাটালিয়ন (১) এবং ဗိုလ်စကြာ (বো সিংজ্যা) ইউনিট যৌথভাবে আক্রমণ চালায়।

সংঘর্ষ শুরুর সময় আমাদের বাহিনীই প্রথমে হামলা চালায়। কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষস্থলে জান্তা বাহিনীর একটি রিজার্ভ ইউনিট আনুমানিক ৩০ জন সেনা নিয়ে এসে শক্তি বাড়ায়, ফলে লড়াই আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই যুদ্ধে আমাদের পক্ষে এক যোদ্ধা দুহাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তবে আমরা জান্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে MA ধরনের ৩টি হালকা আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে সক্ষম হই। ঘটনার পর প্রাপ্ত প্রমাণাদি অনুযায়ী, জান্তা বাহিনীর পক্ষে একজন ডেপুটি কমান্ডারসহ মোট ৪ জন নিহত হয়েছে এবং আরও ৬ জন আহত হয়েছে।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মিয়ানমারের।

সুতরাং, মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হওয়া সংঘর্ষের দৃশ্যকে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও জেএসএস (সন্তু) দলের মধ্যে হওয়া গোলাগুলির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র