চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মুজিবুল হক এমপি আহত হননি

সম্প্রতি, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লা-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আহত হয়েছেন দাবি করে জাতীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের ওয়েবসাইট এবং প্রিন্ট সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন নিউ এজ

গণমাধ্যমটির প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৬ জুন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব আহত হননি বরং সংঘর্ষের দিন মুজিবুল হক কুমিল্লাতেই ছিলেন না। তিনি সে-সময় ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে ৬ জুন ‘কুমিল্লায় আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৫‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangla Tribune 

প্রতিবেদনটিতে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৬ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। 

Screenshot: Bangla Tribune 

প্রতিবেদনটিতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বরাতে বলা হয়, ঐ সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মাঝে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি থেকে আহতদের নামের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে একইদিনে ‘কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। 

Screenshot: Daily Prothom Alo 

এই প্রতিবেদন থেকেও সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের নামের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এ ঘটনায় অন্যান্য গণমাধ্যম যেমন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ‘20 hurt as AL factions clash ‘, অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর  ‘আওয়ামী লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ‘, কালেরকণ্ঠের ‘কুমিল্লায় আ. লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, মহাসড়কে ভোগান্তি’, নিউজবাংলা২৪ এর ‘কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২৩‘, সমকালের ‘কুমিল্লায় আ. লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ‘ প্রতিবেদন থেকেও উল্লেখিত ঘটনায় সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের উপস্থিতি ও তার আহত হওয়ার দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গণমাধ্যমের পাশাপাশি মুজিবুল হকের উপস্থিতি সম্পর্কে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম সংঘর্ষের ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুজিবুল হকের সমর্থক কর্তৃক প্রচারিত একাধিক পোস্ট যাচাই করে দেখে। এসব পোস্টের ছবি ও ভিডিওতে সংঘর্ষের দিন ঘটনাস্থলে মুজিবুল হকের অনুগত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থাকলেও সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে

Image Collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জুয়েল এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি মীর হোসেন মীরু এবং চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। 

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রামে মুজিবুল হকের বিরোধী পক্ষের নেতা চৌদ্দগ্রামের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে আমি বা মুজিবুল হক সাহেব আহত হননি এবং তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন না।’ 

সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জুয়েল বলেন, ‘স্যার ঐদিন ঢাকায় ছিলেন, উনার সংসদ ছিল। তাহলে উনি কিভাবে কুমিল্লায় সংঘর্ষে থাকেন?’

একই বিষয়ে মুজিবুল হক এমপির অনুগত নেতা, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি মীর হোসেন মীরু বলেন, ‘ঐদিনের ঘটনায় মুজিবুল হকের উপস্থিত থাকা ও আহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়, এটি মিথ্যা।’

এছাড়া চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের আহত হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। তিনি তো ঢাকায় ছিলেন, আহত হবেন কিভাবে?’

মূলত, গত ৬ জুন কুমিল্লা-১১ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং বেশ কয়েকজন আহতও হয়। তবে পরবর্তীতে এই ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে মূলধারার জাতীয় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ জানায়, উক্ত সংঘর্ষে সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি আহত হয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার কর্মী সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ হলেও তিনি সে ঘটনায় আহত হননি এবং তিনি কুমিল্লাতেও উপস্থিত ছিলেন না।

সুতরাং, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক আহত হয়েছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক নিউ এজে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img