নীলফামারীতে ধর্ষণের শিকার এই কিশোরী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া গ্রামে ১৪ বছরের এক হিন্দু মেয়েকে আব্দুল কুদ্দুস ও ছামিনুর রহমান নামের দুইজন ইসলামপন্থী ব্যক্তি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। আরও দাবি করা হয়, ধর্ষণকারীরা ওই কিশোরীকে অপহরণ করে একটি ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।

এক্সে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ধর্ষণের শিকার কিশোরী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়। এছাড়াও, ধর্ষণকারীদের সাথে ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলেরও সংশ্লিষ্টতা নেই।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ভিডিওটিতে ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে দেখতে পাওয়া যায়। তার চেহারা প্রযুক্তির সহায়তায় ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরার পেছনে থাকা একজন ব্যক্তির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ভিডিওটিতে ওই কিশোরীকে উত্তর দিতে দেখা যায়। ভিডিওটির শুরুতেই মেয়েটি তার নাম উল্লেখ করে। যেটি মূলত একটি মুসলিম নাম। এছাড়াও সে জানায়, পানি আনতে গেলে অভিযুক্তরা তার মুখ বেঁধে জোড়পূর্বক তাকে একটি ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সংবাদমাধ্যম সময়ের কণ্ঠস্বরের ওয়েবসাইটে গত ১ মার্চ নীলফামারীতে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ২ বন্ধু শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ছাতনাই বালাপাড়া গ্রামে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই রাতেই ছামিনুর রহমান ও আব্দুল কুদ্দুস নামের দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ওই কিশোরী সন্ধ্যায় নলকূপ থেকে পানি আনতে গেলে সেখানে ওত পেতে থাকা উক্ত দুই বখাটে যুবক কিশোরীর হাত মুখ বেঁধে পার্শ্ববর্তী ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।

তবে প্রতিবেদনের কোথাও মেয়েটির ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রকাশিত অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও (দেশ রূপান্তরআজকের পত্রিকা) এটি উল্লেখ করা হয়নি।

তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডিমলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ ফজলে এলাহীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ধর্ষিতা, ধর্ষণকারী এবং সহায়তাকারী সকলেই মুসলিম। মূলত, গ্রেফতারকৃত দুইজনের মধ্যে একজন ধর্ষণে সহায়তাকারী। তবে তাদের সাথে ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো সংশ্লিষ্টা নেই বলেও জানান তিনি।

সুতরাং, নীলফামারীতে ১৪ বছরের হিন্দু কিশোরীকে অপহরণ করে ইসলামপন্থীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img