সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি নেমপ্লেটের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উক্ত দাবিতে পোস্টকৃত নেমপ্লেটটিতে লেখা রয়েছে,
“উপ-সচিব
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়
সুবোধ চন্দ্র ঢালী”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে উপ সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি নেই। পূর্বে সুবোধ চন্দ্র ঢালী নামের এক কর্মকর্তা কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগ বা শাখায় উপ সচিব পদে দায়িত্বে ছিলেন, মাদ্রাসা অনুবিভাগে নয়।
প্রচারিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তালিকা পর্যবেক্ষণ করে উপসচিব পদে কোথাও সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
তবে, ২০২২ সালে শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে দাবিতে সেসময় ইন্টারনেটে প্রচারিত ভুয়া তালিকার বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় তথ্য বাতায়নের বরাতে উল্লিখিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দের তৎকালীন তালিকায় উপ-সচিব পদে সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে উক্ত তালিকায় তার পদবীর পাশে ব্রাকেটে উল্লিখিত তথ্য (কারিগরি-২) অনুযায়ী জানা যায়, তিনি উক্ত বিভাগের কারিগরি শাখার দায়িত্বে ছিলেন, মাদ্রাসা অনুবিভাগ বা শাখার নয়।
এছাড়া, এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডি’র ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরুকালীন বিভাগটির কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকায় উপ-সচিব (কারিগরি-২) পদে সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
তাছাড়া, বর্তমানে উল্লিখিত উক্ত পদে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তালুকদার উপসচিব হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
মূলত, পূর্বে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগের উপসচিব পদে সুবোধ চন্দ্র ঢালী দায়িত্বপালন করেছেন। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের নাম একসাথে হলেও দুইটি অনুবিভাগে আলাদা ব্যক্তি দায়িত্বপালন করেন। তাছাড়া, সুবোধ চন্দ্রের কর্মরত পদ কারিগরি শাখার উপসচিব পদেও বর্তমানে অন্য একজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তা দায়িত্বপালন করছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বে সচিবালয়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিবের সংখ্যা ৪০০ দাবি করে সুবোধ চন্দ্র ঢালীকে মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপ সচিব বলে দাবি করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
অর্থাৎ, মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব পদে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- TMED.gov.bd – কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকা (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে নয় )
- Rising BD – কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরু
- Rumor Scanner’s own analysis