সম্প্রতি, “সচিবালয়ে মুসলিম নেই বললেই চলে। ৪০০ জন হিন্দু সচিব, মাদ্রাসার উপসচিব ও হিন্দু। বইয়ে সমকামিতার গল্প ছাড়া কি বা আসা করা যায়।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিব থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং বর্তমানে সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৮৭ জন এবং এর মধ্যে ৮২ জনই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাকি ৫ জনের মধ্যে ৪ জন হিন্দু এবং ১ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
এছাড়া মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সরকারের দুইটি বিভাগের একটিতে উপ-সচিব নামে পদবিই নেই এবং আরেকটিতে উপ-সচিব পদ থাকলেও উক্ত পদে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি নেই।
দাবি যাচাই: ০১
অনুসন্ধানের প্রথমে রিউমর স্ক্যানার টিম সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিব থাকার দাবির বিষয়টি যাচাইয়ে কাজ শুরু করে।
দাবির সত্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সেকশনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বেশেষ হালনাগাদকৃত সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়।

তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করে তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের নামের ধরণ দেখে বলা যায়, মোট ৮৭ জন সচিব/ ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার মধ্যে অধিকাংশই(৮২ জন) ইসলাম ধর্মাবলম্বী। উক্ত তালিকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির সংখ্যা মাত্র ৪ জন। বাকি একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তারা হচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব সত্যজিত কর্মকার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন জনাব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) জনাব সুকেশ কুমার সরকার। তালিকায় থাকা একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া।
দাবি যাচাই: ০২
মাদ্রাসার উপ-সচিব হিন্দু ধর্মাবলম্বী এমন দাবির সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতে শুধু মাদ্রাসা নামে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে মাদ্রাসার সাথে সম্পর্কিত দুইটি প্রতিষ্ঠান আছে। একটি হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, আর অপরটি হচ্ছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে উপ-সচিব নামে পদবিই নেই।

এছাড়া, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দের তালকায় উপ-সচিব পদে মোট ১১ জন ব্যক্তি নিয়োজিত আছেন। তবে তাদের কেউই হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন।

তবে, কিছু কিছু পোস্টে মাদ্রাসার উপ-সচিব দাবিতে এক কর্মকর্তার নেমপ্লেটের ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

নেমপ্লেটটিতে লেখা রয়েছে,
“উপ-সচিব
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়
সুবোধ চন্দ্র ঢালী”
উক্ত বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে ২০২২ সালে শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে দাবিতে সেসময় ইন্টারনেটে প্রচারিত ভুয়া তালিকার বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় তথ্য বাতায়নের বরাতে উল্লিখিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকা উপ-সচিব পদে সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে উক্ত তালিকায় তার পদবীর পাশে ব্রাকেটে উল্লিখিত তথ্য (কারিগরি-২) অনুযায়ী জানা যায়, তিনি উক্ত বিভাগের কারিগরি শাখার দায়িত্বে ছিলেন, মাদ্রাসা শাখার নয়।
এছাড়া, এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডি’র ওয়েবসাইট ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরুকালীন বিভাগটির কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকায় উপ-সচিব(কারিগরি-২) পদে সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের আধিক্য দাবিতে বেশ কয়েকবছর যাবৎ নানাধরণের তালিকা ও তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিব এবং মাদ্রাসার উপসচিব পদে হিন্দু ব্যক্তি রয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৮৭ জন। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির সংখ্যা মাত্র ৪ জন। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা অধিকাংশই (৮২ জন) ইসলাম ধর্মাবলম্বী। উক্ত তালিকায় ১ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন। এছাড়া মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সরকারের দুইটি বিভাগের একটি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে উপ-সচিব নামে পদবিই নেই। এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব পদে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি নেই।
সতরাং, সচিবালয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিবের সংখ্যা ৪০০ এবং মাদ্রাসার উপ-সচিব হিন্দু ধর্মাবলম্বী দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- cabinet.gov.bd – Website
- dme.gov.bd – Website
- timed.gov.bd – Website
- Risingbd – কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরু