রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আতশবাজির ট্রাকে আগুন লাগার ভুল তথ্য গণমাধ্যমে

গত ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হয় ভারতের অযোধ্যায় নির্মিত বহুল আলোচিত রামমন্দির। গত ১৬ জানুয়ারি রাতে অযোধ্যার কাছাকাছি উত্তরপ্রদেশের উন্নাও শহরের খড়গিখেদা নামের একটি গ্রামে আতশবাজিবাহী একটি ট্রাকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এতে দাবি করা হয়, ট্রাকটিতে অযোধ্যায় নির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্যে আতশবাজি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। 

রামমন্দির

গণমাধ্যমের এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল ২৪, আরটিভি

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের উত্তরপ্রদেশের উন্নাও শহরে আগুন লাগা ট্রাকটি রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্যে আতশবাজি নিয়ে যাচ্ছিল নাবরং, ট্রাকটি তামিলনাড়ু থেকে বাহরাইচ নামের একটি শহরে দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি, শিশুদের পোস্টার, চলচ্চিত্র শিল্পীদের পোস্টার এবং ধর্মীয় পোস্টার নিয়ে যাচ্ছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ জানুয়ারি Truck carrying fireworks from TN to Bahraich catches fire শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Times of India

প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আতশবাজিবাহী ট্রাকটি তামিল নাডু থেকে বাহরাইচ-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। কিন্তু উন্নাওয়ের খড়গিখেদা নামের একটি গ্রামে পৌছানোর পর ট্রাকটিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনে ট্রাকটির সাথে অযোধ্যার রামমন্দিরের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরো অনুসন্ধান করে উন্নাও পুলিশের ভেরিফাইড এক্স (টুইটার) একাউন্টে গত ১৭ জানুয়ারি করা একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: X

হিন্দি ভাষার উক্ত টুইট থেকে জানা যাচ্ছে,  গত ১৭ জানুয়ারি ভোর চারটায় আতশবাজি বোঝাই ট্রাক নম্বর TN 28 AL 6639 পূর্বা থানার অন্তর্গত খড়গিখেদা গ্রামের কাছে অজ্ঞাত কারণে আগুন ধরে যায়। ট্রাকটি তামিলনাড়ু থেকে বাহরাইচ যাচ্ছিল এবং এতে দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি, শিশুদের পোস্টার, চলচ্চিত্র শিল্পীদের পোস্টার এবং ধর্মীয় পোস্টার বোঝাই করা ছিল।

এছাড়াও Mamta Tripathi নামের একজন ভারতীয় গণমাধ্যম কর্মীর এক্স অ্যাকাউন্টে উন্নাও পুলিশের ডেপুটি এসপি সোনম সিংয়ের উক্ত ঘটনায় দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: X

এই ভিডিওতেও এসপি সোনম সিংকে একই তথ্য দিতে দেখা যায়। 

মূলত, গত ১৬ জানুয়ারি রাতে ভারতের উত্তরপ্রদেশের উন্নাও শহরের খড়গিখেদা নামের একটি গ্রামের পাশে সড়কে আতশবাজিবাহী ট্রাকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর কদিন পর ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় নবনির্মিত আলোচিত রামমন্দিরটির উদ্বোধন করা হয়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে অযোধ্যার দূরত্ব নিকটে হওয়ায় ট্রাকটি রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আতশবাজি নিয়ে যাচ্ছিল দাবিতে উক্ত ট্রাকের ভিডিওসহ তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমের  বরাতে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অগ্নিকান্ডের শিকার আতশবাজিবাহী ট্রাকটি অযোধ্যর আলোচিত রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আতশবাজি নিয়ে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ট্রাকটি তামিল নাডু থেকে বাহারাইচ নামের একটি অঞ্চলে দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি, শিশুদের পোস্টার, চলচ্চিত্র শিল্পীদের পোস্টার এবং ধর্মীয় পোস্টার নিয়ে যাচ্ছিল।

সুতরাং, দোকানে সরবরাহের আতশবাজিবাহী ট্রাকে আগুন লাগার ঘটনাকে গণমাধ্যমে অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আতশবাজিবাহী ট্রাক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img