গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ” শিরোনামের লাইন দুটি কবি হেলাল হাফিজের নামে প্রচারিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি, ১৩ ডিসেম্বর কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুর পর এই লাইনগুলো আরও ব্যাপকভাবে তার নামের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ” লাইন দুটি কবি হেলাল হাফিজের লেখা নয়। এটি ভারতের সুব্রত মাইতি, ওরফে সুব্রত বারিষওয়ালার রচনা। তবে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এই লাইনগুলো হেলাল হাফিজের নামে প্রচারিত হয়ে আসছে।
দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয়। তবে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে, ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ‘Dipendu Halder’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে কবি হেলাল হাফিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি স্ক্রিনশট যুক্ত থাকতে দেখা যায়। স্ক্রিনশটের ওই পোস্টে হেলাল হাফিজ জানিয়েছেন, আলোচিত কবিতাটি তার লেখা নয়।

দীপেন্দু হালদারের পোস্টে বলা হয়েছে, “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ” লাইন দুটি ফেসবুকে ২০১৭ সাল থেকেই পরিচিত, তবে এটি কবি হেলাল হাফিজের নয়, বরং ভারতীয় গীতিকার সুব্রত বারিষওয়ালার রচনা। লাইন দুটি ভুলভাবে হেলাল হাফিজের নামে প্রচার হওয়ায় সুব্রতকে বারবার অবমূল্যায়নের শিকার হতে হয়েছে, এমনকি “চোর” বলে অপবাদও শুনতে হয়েছে। পরবর্তীতে, কবি হেলাল হাফিজ নিজেই এই লাইনগুলোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে নিশ্চিত করেন। দীপেন্দু সবাইকে প্রকৃত লেখক সুব্রত বারিষওয়ালার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার এবং ভুল প্রচার সংশোধনের আহ্বান জানান।।
তবে, বর্তমানে হেলাল হাফিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, সেসময় ‘Bonnya Kar’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট প্রচার করা হয়।

বন্যা করের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয় যে, “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ” লাইন দুটি সুব্রত বারিষওয়ালার রচনা। তিনি লেখকের প্রতি গর্ব প্রকাশ করে জানান, লাইনগুলো বাংলাদেশের দেয়ালজুড়ে জনপ্রিয় হলেও দীর্ঘদিন এটি ভুলভাবে কবি হেলাল হাফিজের নামে প্রচারিত হয়েছে। অবশেষে, হেলাল হাফিজ নিজেই নিশ্চিত করেছেন যে লাইনগুলো তার লেখা নয় এবং প্রকৃত লেখক সুব্রত বারিষওয়ালা।
রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে সুব্রত বারিষওয়ালার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এটি তার লেখা। তিনি জানান, ২০১৭ সালে তিনি এটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন এবং সেই পোস্টের লিংকও সরবরাহ করেন।

তিনি আরও জানান, লাইনগুলো তার বই “কবিতায় শুয়ে কাপলেট”-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে এটি একটি গানের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই গানের ইউটিউব লিংকও তিনি সরবরাহ করেছেন।
লেখাটি হেলাল হাফিজের নয় বলে নিশ্চিত করে সুব্রত বারিষওয়ালা জানান, হেলাল হাফিজ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন। তবে, পরবর্তীতে তিনি সেই পোস্টটি মুছে ফেলেন। মুছে ফেলার আগে সুব্রত বারিষওয়ালা স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করেন এবং তা নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন। সেই স্ক্রিনশটযুক্ত ২০২১ সালে প্রকাশিত ফেসবুক পোস্টের লিংক রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন সুব্রত।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়েও ২০১৭ সালে সুব্রত বারিষওয়ালা লাইনগুলো পোস্ট করার আগে এর কোনো পূর্ব প্রকাশ বা অস্তিত্বের সন্ধান খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ” লাইনগুলো কবি হেলাল হাফিজের লেখা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dipendu Halde: Facebook Post
- Bonnya Kar: Facebook Post
- Subrata Barishwala: Facebook cover photo
- Subrata Barishwal: Facebook Post
- Soumik Das: Michhileo Prem Hok || Dr.Soumik Das || Barishwala || Nilabja Niyogi
- Rumor scanner’s Own Analysis