মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যার দাবিতে ব্রাজিলের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, মালয়েশিয়ায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করার মুর্হুতে ওই বাসার মেয়ে দিকে তাকানোর কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় বাসার মেয়ের দিকে তাকানোর অপরাধে প্রবাসী বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ব্রাজিলের মানাউশ শহরের পুরোনো হত্যাকাণ্ডের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রাজিলের মানাউশ শহরের একটি স্থানীয় গণমাধ্যম Portal Tucumã-এর ওয়েবাসাইটে ২০২৪ সালের ২৮ জুন VIDEO: PCC gunmen film execution of ‘Olhão’ in Manaus (ইংরেজিতে অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে উক্ত হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটিও দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘটনাটি প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই মানাউশ শহরের দক্ষিণ অঞ্চলের নভো আলেক্সো পাড়ার পেনেট্রাসিওন ২ নামক সড়কে ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম লুকাস পেরেইরা। তবে তিনি ওলহাও নামে অধিক পরিচিত বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাকে আমাজনাসের পিসিসি বা প্রাইমিরো কমান্ডো দা ক্যাপিটাল নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা হত্যা করেন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ রয়েছে তা জানা যায়নি বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওলহাও তার এলাকায় মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত থাকায় এর সাথে মাদকের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জানা যায়, মানাউস ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের আমাজোনাস রাজ্যের একটি শহর।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Actualidad Viral নামের আরেকটি গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে একই ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওলহাও বা লুকাস মাদক দ্রব্য বহন করার কারণে ২০১৫ সালে আটক হন এবং পরবর্তীতে ২০১৭ মুক্তি পান। তবে ২০২৪ সালে তিনি পুরনায় মাদকদ্রব্য চোরচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েন যার কারণে তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের সময়ও একটি এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছিল।

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, তার হত্যাকাণ্ডটি ওই অঞ্চলের মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে সে সময়ে চলমান বিবাদের সাথে সম্পর্কিত। কারণ তিনি পিসিসি বা প্রাইমিরো কমান্ডো দা ক্যাপিটাল নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ গ্রুপ সিভি বা কমান্ডো ভার্মেলহোর একজন সদস্য ছিলেন।

অর্থাৎ, আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটির সাথে মালয়েশিয়া কিংবা কথিত প্রবাসী বাংলাদেশির কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, ব্রাজিলের পুরোনো হত্যা কাণ্ডের ভিডিওকে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিকে সাম্প্রতিক সময়ে ‍গুলি করে হত্যার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img