লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দাবিটি ভুয়া

গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ডিআরইউতে একটি গোলটেবিল আলোচনা চলাকালে একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের ওপর চড়াও হন। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা এই ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যপশনে লেখা হয়েছে, “বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে মব রাজার পালিত সন্ত্রাসীরা ”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ভিডিওটি  আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে সম্প্রতি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং প্রচারিত ভিডিওটি লতিফ সিদ্দিকীর জেলা টাঙ্গাইলেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে সাবেক হুইপ ও গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আরা বেগম গিনির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা দাবিতে ভিডিওটি অনলাইনে পোস্ট হতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোতে দাবিটির সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চে করে ‘শিতল-বাসী (ঝিনাশ্বর শিতলীর মোর ফেসবুক গ্রুপ)’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Md. Rigon Sarker’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সাবেক গিনি এমপির বাড়িতে জনতার আগুন ভাংচুর লুটপাট।”

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দাবির সপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ২৯ আগস্টে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে ‘লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে আগুনের ভিডিওটি গুজব, নজরদারিতে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তবে ঘটনাটি সম্পূর্ণ গুজব বলে জানিয়েছে পুলিশ, স্থানীয় ব্যক্তি ও লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠজনরা। লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িটি নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।.. এ বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকীর ছোটভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের একান্ত সচিব ফরিদ আহমেদ জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা কালিহাতী বা টাঙ্গাইলে ঘটেনি।”

মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “আব্দুল লতিফ সিদ্দিক স্বজনরা বলেন, ‌এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি গুজব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লতিফ সিদ্দিকীর বাসায় নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে। একইরকম তথ্য আরো একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৮ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লতিফ সিদ্দিকীর বাসার সামনে অবস্থান করছে কালিহাতী থানা পুলিশ’। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত বাড়ি অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর উক্ত বাড়ির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত বাড়ির ডিজাইনেও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আলোচিত দাবিটি ভুয়া নিশ্চিত করে জানান, লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। 

সুতরাং, অন্তত ১ বছর পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img