খিলক্ষেতে বিএনপি কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার ভিডিওটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের, জামায়াত কিংবা এনসিপির হামলার নয়

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজধানীর খিলক্ষেতে বিএনপির কার্যালয় অফিস গুঁড়িয়ে দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটি প্রচার করে কিছু ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, সাধারণ জনতা অফিসটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, জামায়াত ও এনসিপি অফিসটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

সাধারণ জনতা গুড়িয়ে দিয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

জামায়াত-এনসিপি গুড়িয়ে দিয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

জামায়াত-এনসিপি গুড়িয়ে দিয়েছে দাবিতে এক্সে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর খিলক্ষেতে বিএনপির কার্যালয় অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি কিংবা সাধারণ জনতার সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে গত জুন মাসে বিএনপির এই কার্যালয়টি গুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪.কম -এর লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ জুন ‘খিলক্ষেতে বিএনপির অফিস গুড়িয়ে দিলো যৌথবাহিনী’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নির্দিষ্ট অংশের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি সান পত্রিকার বাংলা সংষ্করণের ইউটিউব চ্যানেলেও গত ২৬ জুনখিলক্ষেতে বিএনপির অফিস গুড়িয়ে দিলো যৌথবাহিনী’ শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওতেও একই ঘটনার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলো এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত ‘রাজধানীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দখলমুক্ত হলো রেলের ৫ একর জমি’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে খিলক্ষেত রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা দুই শর মতো স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের পাঁচ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।’

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘উচ্ছেদ অভিযান তদারককারী বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে খিলক্ষেত রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশ ঘেঁষে টিন, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে আশপাশে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। ট্রেন চলার সময় মনে হতো এই বুঝি অবৈধ স্থাপনার সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কা লাগছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রেললাইনের দুই পাশের স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করা হয়।বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত চলা এই উচ্ছেদ অভিযানে সেনাবাহিনী, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও পুলিশ অংশ নেয়। রেলওয়ের বুলডোজার এ সময় একের পর এক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মধ্যে একটি স্থানীয় বিএনপি ও একটি জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় ছিল। এ ছাড়া রেলের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি মন্দিরও রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের পর রেলের জমি অবৈধভাবে দখল করে টিন ও বাঁশ দিয়ে একটি মন্দির গড়ে তোলা হয়। কিছুদিন ধরে সেটি পাকা করার কাজ শুরু করা হয়েছিল।’

অর্থাৎ, খিলক্ষেতে বিএনপির কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাধারণ জনতা, জামায়াত কিংবা এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। 

সুতরাং, গত জুন মাসের শেষের দিকে খিলক্ষেতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়ার ভিডিওকে সম্প্রতি বিএনপির প্রতি ক্ষোভ থেকে জামায়াত, এনসিপি ও সাধারণ জনতা খিলক্ষেতের বিএনপির কার্যালয় গুড়িয়ে দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img