খালেদা জিয়াকে সব মামলা থেকে মুক্তির গুজব

চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভিডিওটির থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবি যুক্ত করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতারা জেলে যাবে। 

খালেদা জিয়া

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৪০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে ৫ শতাধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের জেলে যাওয়ার দাবিটিও সঠিক নয়। কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সব মামলা থেকে মুক্তির বিষয়ে বলা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে  এ সম্পর্কিত  কোনো তথ্যই পাওয়া যায় নি। বরং, ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে  বাংলাদেশের নির্বাচন, বাংলাদেশের নানা বিষয়ে বহির্বিশ্বের অভিব্যক্তি, আওয়ামী লীগ সভাপতি  ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা বিষয়ে বক্তব্য ও ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে নানা সংবাদ পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেইলে উল্লেখিত  বেগম খালেদা জিয়াকে সব মামলা থেকে মুক্তির বিষয়ে ভিডিওটিতে কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয় নি। এছাড়া, ভিডিওটির থাম্বনেইলে আওয়ামী লীগ নেতাদের জেলে যাওয়ার বিষয়েও বলা হলেও বিস্তারিত ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা বক্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায় নি । 

তাছাড়া ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আরও দেখা যায়, ভিডিওটিতে ‘তাজা খবর’ এবং টাইটেলে ভিডিওটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিলের কথা উল্লেখ  থাকলেও ভিডিওটির প্রথম অংশ বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই ধারণ  করা হয়েছে। ভিডিওটির প্রথম অংশে, “আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সংসদ নির্বাচন” বাক্যটি শুনে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার ভিডিওটির শেষ অংশ ধারণ করা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর৷ শেষ অংশে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট দেওয়া শতকরা ভোটারের সংখ্যা শুনে এ বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিডিওতে উল্লিখিত প্রথম অংশসহ বেশ কিছু অংশ বেশ কয়েকমাসের পুরোনো, যা কোনোভাবেই তাজা খবর নয়। তাছাড়া, ভিডিওটিতে উল্লেখিত থাম্বনেইলের সাথেও ভিডিওটির বিস্তারিত তথ্যের কোনো মিল নেই।

বিষয়টি আরও যাচাইয়ের লক্ষ্যে আলোচিত ভিডিওটি থেকে খালেদা জিয়ার কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের ছবির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ, ভিন্ন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার পুরাতন ছবি সাম্প্রতিক সময়ে সব মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে প্রচার হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটি থেকে খালেদা জিয়ার একটি স্থিরচিত্রের সাথে ২০১৮ সালে আরব নিউজে প্রকাশিত সংবাদে খালেদা জিয়াকে মেডিক্যাল চেকআপে নেওয়া অবস্থায় তোলা একটি ছবির সাথে হুবহু মিল খোঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

আলোচিত ভিডিও থেকে নেওয়া খালেদা জিয়ার অন্য আরেকটি স্থিরচিত্রের সাথে ২০১৯ সালে বিবিসি বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদে “আদালত চত্বরে খালেদা জিয়া” শিরোনামে ব্যবহৃত একটি ছবির সাথে হুবহু মিল খোঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আসলেই সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কি না এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে প্রচার করে এই দাবি করা হলেও, এর চারদিন পর অর্থাৎ গত ২২ এপ্রিল  দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভিতে ”১১ মামলায় খালেদার হাজিরার নতুন তারিখ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১১টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৯ জুলাই চলমান এসব মামলায় আদালতে হাজির হতে হবে তাকে। 

পাশাপাশি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের জেলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতারা অন্যান্য মামলা বা কারণে জেলে গেলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে হামলার অভিযোগে একজন আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে এই ঘটনার সাথে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

মূলত, কয়েক বছর পূর্বে মামলা চলাকালীন নানা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিছু স্থিরচিত্র নানা গণমাধ্যমে প্রচার হয়। সেই কয়েক বছর পুরাতন ভিন্ন ঘটনার স্থিরচিত্রগুলো অধিক ভিউয়ের আশায় খালেদা জিয়াকে সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতারা জেলে যাবে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এখনও সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, খালেদা জিয়াকে সব মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img