গত ০৭ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলাধীন খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল আহাদ আজমের নেতৃত্বে ৩-৪ জন নেতাকর্মী খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হাফেজ মোঃ শাহ আলম। সেসময় তারা হিন্দুদের মন্দিরে নগদ অর্থ সহায়তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ঐদিন ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও তাদের রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে অবগত করেন। তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১২ নম্বর ধারা তাদের পাঠ করে শোনান। এ সময় তাদের অমুসলিম সদস্যদের জন্য নির্ধারিত সদস্য ফর্ম পূরণ করানো হয় এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ধারণা দিতে ‘অমুসলিম এবং জামায়াতে ইসলামী’ নামের একটি বই প্রদান করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে দাবি করা হচ্ছে– ২৭ হিন্দু পরিবারকে জোর করে, দেশত্যাগ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করেছে জামায়াতে ইসলামী।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এক্স (সাবেক টুইটার) প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এইদিন’ নামের ভারতীয় সংবাদ পোর্টালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লালমনিরহাটে ২৭ হিন্দু পরিবারকে জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক জোর করে, দেশত্যাগ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার দাবিটি সঠিক নয় বরং তাদের ফর্ম পূরণ করানোর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করানো হয়। এছাড়া, ভয় দেখানো, হত্যা ও দেশত্যাগের হুমকি দেয়ার দাবিগুলো মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছেন সদস্যপদপ্রাপ্ত একাধিক হিন্দু ব্যক্তি।
অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে ‘মুহা জাহাঙ্গীর আলম’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টে তিনি বলেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি ২, নম্বর ওয়ার্ড (২৭) জন সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী লালমনিরহাট জেলা শাখার সম্মানিত সহকারী সেক্রেটারি হাফেজ মোঃ শাহ আলম। অনুষ্ঠানে জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ১২ নম্বর ধারা তাদের পাঠ করে শোনানো হয়। অতঃপর গঠনতন্ত্রের পরিশিষ্ট ১১ নম্বরে অমুসলিমের শপথনামা অনুযায়ী তাদের শপথ অনুষ্ঠিত হয় এবং সকলে স্বাক্ষর প্রদান করেন। সূত্র অনলাইন উল্লেখ করা হয় পোস্টটিতে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে লালমনিরহাটের ডেইলি স্টারের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি এস দীলিপ রায় বলেন, “জামায়াতের সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন এটি সঠিক। তবে, জোর করে দেশত্যাগ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার দাবিটি সঠিক নয়।”
পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে রিউমর স্ক্যানার লালমনিরহাট জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হাফেজ মোঃ শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করে। বিষয়টি নিয়ে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “তাদের ধর্মান্তরিত করার দাবি মিথ্যা। আমাদের সংগঠনে অনেক অমুসলিম সদস্য রয়েছেন। তাদের সদস্য করা হয়েছে কেবল। এছাড়া হত্যা, দেশত্যাগের হুমকি দেওয়ার দাবিও মিথ্যা।”
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য সদস্যপদ গ্রহণ করা একাধিক হিন্দু ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সদস্যপদ নেওয়া শ্রী রঞ্জিত কুমার রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, গত ৭ তারিখ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শাহ আলমের ভাইয়ের কথা শুনে আমরা নিজেদের ইচ্ছায় ১০-১৫ জন সদস্যপদ গ্রহণ করি। এখানে আমাদের ধর্মান্তরিত করা হয়নি বা চাপও দেওয়া হয়নি। দেশত্যাগের হুমকিও দেওয়া হয়নি।
সদস্যপদ নেওয়া আরেক ব্যক্তি নারু গোপাল রায় বলেন, এখানে আমাদের সাথে কেউ খারাপ আচরণ বা চাপ দেননি। তারা আমাদের পাশে থাকবেন বলেছেন। তাই আমরা সদস্য হয়েছি। কিন্তু বলা হচ্ছে আমি মুসলিম হয়ে গেছি। এটি মিথ্যা। উনারা আমাদের ধর্মান্তরিত করেননি এবং দেশ ত্যাগের হুমকিও দেননি। যারা প্রচার করছে আমি কয়েকজনকে নিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছি, তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সুতরাং, লালমনিরহাটে জামায়াতে ইসলামীর হিন্দুধর্মাবলম্বী কয়েকজনকে সদস্যপদ প্রদানের কিংবা কয়েকজন হিন্দুধর্মাবলম্বীর জামায়াতে ইসলামীর সদস্য হওয়ার ঘটনাকে বিভ্রান্তিকরভাবে হিন্দুদের জোর করে, দেশত্যাগ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- Local Journalist- Statement
- Md. Sha Alom- Statement
- Ranjit Kumar- Statement
- Naru Gopal Ray- Statement