গত ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্যদের পাশাপাশি উক্ত সম্মেলনে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা: পরিমল কান্তি দে বক্তব্য রাখেন দাবিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম বাংলা ভিশন একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করা হয়।

বাংলাভিশন-এ প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন আওয়ামী লীগ নেতা ডা: পরিমল কান্তি দে-এর বক্তব্য দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য পরিমল কান্তি শীলকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর আবদুল্লাহ আল ফারুকের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে তিনি জানান, জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখা ব্যক্তির নাম পরিমল কান্তি শীল। যার পিতার নাম বিনোদ বিহারী শীল। অপরদিকে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার নাম পরিমল কান্তি দে। তার পিতার নাম স্বর্গীয় অশ্বিনী কুমার দে। উক্ত তথ্যের ভিত্তি হিসেবে পোস্টটিতে পরিমল কান্তি শীলের জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার ছবির পাশাপাশি পরিমল কান্তি দে-এর ও বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির তালিকার ছবিও প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বাংলাভিশন-এ প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটি থেকে জানা যায়, “বাংলাভিশন”-এ ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে অমুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দানকারী পরিমল কান্তি শীলকে আওয়ামী’ লীগ নেতা হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী ও সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম।
বিবৃতিতে তারা জানান, পরিমল কান্তি শীল কখনো আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। বাংলাভিশনে পরিবেশিত সংবাদে ‘পরিমল দে’ নামে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হিন্দু ধর্মীয় কল্ল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য পরিমল শীল একই ব্যক্তি নন। এছাড়াও তথ্যের সত্যতা যাছাই না করে এ ধরণের ডাহা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিটির মাধ্যমে।
পাশাপাশি পোস্টটিতে পরিমল কান্তি শীল এবং পরিমল কান্তি দে নামের উভয় ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলাভিশন ব্যতিত উক্ত ঘটনায় অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে তাকে আওয়ামী লীগ নেতার পরিবর্তে হিন্দু নেতা হিসেবে উল্লেখ করতে দেখা যায় (যমুনা টেলিভিশন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ)।

এছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত পঞ্চদশ ট্রাস্টি বোর্ডের তালিকা থেকে জানা যায়, পরিমল কান্তি শীল উক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ নং সদস্য। তার কর্ম-এলাকা কক্সবাজার, খাগড়ছড়ি ও রাঙ্গামাটি।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে News Vision নামের একটি অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমের ফেসবুকে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সম্মেলনে বক্তব্য রাখা ডা: পরিমল কান্তি শীলকে আ’লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মি’থ্যা সংবাদ পরিবেশন বিষয়ে জেলা জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন শীর্ষক শিরোনামে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাভিশনের প্রতিবেদনে পরিমল কান্তি শীলকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়।
অর্থাৎ, কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকারী পরিমল কান্তি শীল এবং আওয়ামী লীগ নেতা ডা: পরিমল কান্তি দে একই ব্যক্তি নন।
সুতরাং, কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা পরিমল কান্তি দে বক্তব্য প্রদান করেছেন দাবিতে বাংলাভিশনে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Abdullah Al Faruk Facebook Post
- Bangladesh Jamaat-e-Islami Facebook Page Post
- হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট Website: http://hrwt.portal.gov.bd/sites/default/files/files/hrwt.portal.gov.bd/page/8c8ccd3e_e850_4fbb_a834_6cf551b2e4d2/2025-01-06-03-54-ba6437b31ea52015f2391bef1a6c8c6d.pdf
- News Vision Facebook Page: জামায়াতের সম্মেলনে বক্তব্য রাখা ডা: পরিমল কান্তি শীলকে আ’লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মি’থ্যা সংবাদ পরিবেশন বিষয়ে জেলা জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন
- Rumor Scanner’s Analysis