কুমিল্লা নয়, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নপত্রটি ঢাকা বোর্ডের

সম্প্রতি “কুমিল্লায় এইচ এস সি পরীক্ষার বোর্ড প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ উঠেছে” শীর্ষক শিরোনাম সহ বিভিন্ন শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

এছাড়াও, দেশীয় গণমাধ্যম “সময়ের আলো” তাদের অনলাইন পোর্টাল, ই-পেপার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রকাশ করে।
পাশপাশি ভুঁইফোড় পোর্টালেও সংবাদটি প্রকাশ করা হয়।

যে প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক

১১ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপকে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে।

‘আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নপত্রটি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের নয় বরং এটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের ছবি।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, দেশীয় গণমাধ্যম “ডেইলি স্টার” এর বাংলা (অনলাইন) সংস্করণে গত ৮ নভেম্বর “এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি: জড়িত ৫ জন চিহ্নিত”  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধনকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাশাপাশি, দেশীয় গণমাধ্যম “সময় টেলিভিশন” এর অনলাইন সংস্করণে গত ৮ নভেম্বর “প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি: জড়িত পাঁচজন চিহ্নিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার পর সেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধনকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়াও, দেশীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম “নিউজবাংলা”-তে গত ৭ নভেম্বর “এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্নটি কুমিল্লা বোর্ডের নয়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, প্রশ্নটি ঢাকা বোর্ডের।

মূলত, গত রোববার (৬ নভেম্বর) সারাদেশে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’ সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্র হিসেবে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে সেই দাবির উপর ভিত্তি করে দেশীয় একটি মূলধারার গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। তবে, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, প্রশ্নটি ঢাকা বোর্ডের।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রেও ‘পীর’ সংক্রান্ত শব্দগত দিক জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশীয় গণমাধ্যম যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এছাড়াও, সময়ের আলো পরবর্তীতে তাদের অনলাইন প্রতিবেদনটি সংশোধন করে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের ছবিকে কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্র দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img