মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের আন্দোলনকে হিন্দু শিক্ষার্থী ১ম হওয়ার কারণে আন্দোলন দাবিতে অপপ্রচার

গত ১৯ জানুয়ারি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত ফলাফলে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন খুলনার সুশোভন বাছাড়। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সুশোভন নামের এক হিন্দু ছেলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় উক্ত পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবিতে জামায়াত আন্দোলন করছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুশোভন বাছাড় নামের ওই হিন্দু শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম হওয়ায় ফলাফল বাতিলের বাতিলে আন্দোলন করা হয়নি বরং, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে উক্ত আন্দোলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশিয় মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২০ জানুয়ারি ‘মেডিকেলে ভর্তিতে কোটা বাতিল করে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিল করে প্রকাশ করা মেডিকেল ভর্তির পরীক্ষার ফল পুনরায় প্রকাশের দাবি জানিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ২০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা ৩টার দিকে তাঁরা শহীদ মিনার ছেড়ে যান তারা।

অর্থাৎ, মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিল করে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।

যে প্রেক্ষিতে আন্দোলন

গত ১৯ তারিখ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা প্রসঙ্গে নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গত ২০ জানুয়ারি Muhammad Miraj Mia নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “আজকে মেডিক্যাল এডমিশনের রেজাল্ট দিয়েছে। ৭২/৭৩ মার্কস পেয়েও অনেকের চান্স হয়নি। অপরদিকে কোটায় মাত্র ৪৬ নাম্বার পেয়ে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। এতো বড় আন্দোলনের পরেও কোটা প্রথা এডমিশন প্রক্রিয়া থেকে বাদ হলো না।”

Screenshot: Muhammad Miraj Mia Facebook

এছাড়াও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি ‘৭০ নম্বর পেয়ে চান্স হলো না মেডিকেলে, কোটায় ৪১ পেয়েও সুযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ নম্বর পেয়েও সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারও শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষায় ৪১ নম্বর থেকে ৪৬ নম্বর পেয়েও প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংরক্ষিত কোটার মার প্যাচের কারণে অনেক বেশি নম্বর পেয়েও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর মেডিকেল কলেজে পড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে গণমাধ্যমটি জানায়, দেশের ৫৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট ৫ হাজার ৩৮০টি আসনের মধ্যে  মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যার জন্য ২৬৯টি এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য ৩৯টি আসন সংরক্ষিত। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ২৬৯টি আসনের মধ্যে ১৯৩ ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে পেরেছেন। যারা পাস নম্বর তুলতে পেরেছেন, তাদের সবাই সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার বাকি আসনগুলো মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমটিকে জানান, ‘আগে সাধারণ আসনের মধ্যে জেলা কোটা থাকলেও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জেলা কোটা বাদ দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০। পাস নম্বর পেয়েই মুক্তিযোদ্ধা এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর উপজাতি শিক্ষার্থীরা সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সব মিলিয়ে আসন রয়েছে ২৬৯টি। তবে এর মধ্যে পাস করেছেন ১৯৩ জন। পাসকৃতদের তথ্য যাচাই করা হবে। এরপর ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হবে।’

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “নাতি-নাতনিদের কোটা বাতিল হয়েছে। কেবল সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু, কেউ যদি নাতিনাতনী হয়ে সন্তান দাবি করে তাহলে তো কিছু বলার নাই। এটা যাচাই করার জন্য তিনদিন সময় দেওয়া হয়েছে । এজন্য রেজাল্টটা প্রাথমিক বলা হয়েছে। এখনও ভেরিফাই হয়নি যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যে সিলেক্ট হয়েছে সে সন্তান নাকি নাতিনাতনী। স্টুডেন্টের দাবির ওপর সিলেক্ট হয়েছে। পরে তিনদিন ভেরিফাই হবে৷ তখন সত্য হলে ফাইনাল হবে।”

তাছাড়া, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কোটার ১৯৩ জনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, উক্ত বিষয়টির সাথে ধর্মীয় কোনো সংযোগ নেই।

সুতরাং, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকে হিন্দু শিক্ষার্থী ১ম হওয়ার কারণে আন্দোলন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img