ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় পটিয়ায় হিন্দু নেতাকে মারধরের তথ্যটি মিথ্যা 

সম্প্রতি ”জাগো! মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ-পাকিস্তান হোক বা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত, হিন্দুরা নির্বিচারে আক্রান্ত হচ্ছে! হ্যাঁ সারা বিশ্বে হিন্দুদের রক্ষা করতে হলে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এর বিকল্প নেই।’  শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে হিন্দি ভাষায় লেখা শিরোনামে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। 

শিরোনামটি বাংলায় অনুবাদ করে দেখা যায় সেখানে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নাশকতা অব্যাহত! ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এক হিন্দু নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।’

টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু টুইট দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এক হিন্দু নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এছাড়া উক্ত ব্যক্তিকে ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় মারধর করা হয়নি বরং তাকে মারধর করা হয়েছিল ইফতার মাহফিলের দাওয়াত না দেওয়া ও এর ব্যানারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নাম না দেওয়ায়। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল ‘পটিয়ায় আ.লীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় পুত্রসহ চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot:  Dainik Azadi

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানায় ইফতার মাহফিলের দাওয়াত ও ব্যানারে হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুউদ্দিন মোহাম্মদ জসীমের নাম না থাকায় জিতেন কান্তি গুহকে মারধর করার অভিযোগ উঠে। জিতেন কান্তি গুহ হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

Screenshot:  Dainik Azadi

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, জিতেন কান্তি গুহকে মারধরের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের একজন হলেন হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুউদ্দিন জসীম ও তার ছেলে ওয়াসি।

Screenshot:  Dainik Azadi

পরবর্তীতে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Times24 এ একইদিনে ‘চট্টগ্রামে আ.লীগ নেতাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত, পুত্রসহ চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরও একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলের ব্যানারে ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম জসিমের নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যান গালিগালাজ করে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।

Screenshot: DhakaTimes24

এসময় আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের সঙ্গে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে চেয়ারম্যান বি এম জসিমের লোকজন জিতেন কান্তি গুহকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে এনে মেরে রক্তাক্ত করে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।

একই ঘটনায় মূলধারার অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও কিছু প্রতিবেদন দেখুন আ.লীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ২ (ঢাকা পোস্ট), গাছে বেঁধে আ.লীগ নেতাকে মারধর, পটিয়ার সেই চেয়ারম্যান পুত্রসহ ধরা (দৈনিক পূর্বকোণ), পটিয়ায় আ.লীগ নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর (যুগান্তর)। 

এসব প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করেও কোথাও জিতেন কান্তি গুহকে ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় মারধরের বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং এসব প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, উক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে।

মূলত, ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়া থানার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলের ব্যানারে ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম জসিমের নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হন হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহ। এই ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও তার পুত্রকে গ্রেফতারও করে। ২০২২ সালের এই ঘটনাটিকেই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এক হিন্দু নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং ইফতার পার্টিতে না যাওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এক হিন্দু নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়েছে দাবিতে ছবি সম্বলিত একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img